রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে। ঘুম প্রতিদিন মানুষের জীবনে কতটা প্রয়োজনীয় জিনিস তা আমরা সকলেই জানি। একজন মানুষকে সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমানোর প্রয়োজন। মানুষ যদি ৬ ঘন্টার কম ঘুমায় তাহলে সে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়বে। প্রাপ্তবয়স্ক ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়সি মানুষকে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমাতে হবে সেটা রাতে।
রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার
তাহলে বুঝতেই পারছেন ঘুম কতটা প্রয়োজনীয় জিনিস। সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ঘুমালে শরীর ও  মন দুটোই ভালো থাকে। এমনকি শারীরিক কার্যকলাপ গুলো সুন্দরভাবে করা যায়। ঘুম শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুস্থ থাকার জন্য, ক্লান্তি দূর করে মনকে ভালো রাখার জন্য, চিন্তাভাবনা থেকে দূরে থাকার জন্য, নিজেকে হাসিখুশি রাখার জন্য ঘুম আমাদের কতটা প্রয়োজন চলুন বিস্তারিত জেনেনি।

    রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার

    রাতে ঘুম না আসা অথবা মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে আর ঘুম না আসেকে বলা হয় ইনসমনিইয়া বা অনিদ্রা রোগ। সাধারণত পূর্ণবয়স্কদের জন্য ৭ থেকে ৮ ঘন্টা শিশুদের জন্য ৯ থেকে ১৩ ঘন্টা নবজাতক বাচ্চাদের জন্য ১২ থেকে ১৭ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।

    সঠিক নিয়মে ঘুমালে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় টক্সিন পদার্থ শরীর থেকে বের হয়ে যায় এতে করে কার্য ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রাতে ঘুম না আসার অনেক কারণ আছে চলুন জেনে নেওয়া যাক।রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে।

    • দুশ্চিন্তা বা টেনশন। কোন কারনে টেনশন করলে আপনার ঘুম আসতে সমস্যা হয় তাড়াতাড়ি ঘুম আসে না।

    • কিছু কিছু খাবারের কারণে ঘুম আসতে সমস্যা হয় যেমন ধরেন চা, কফি, এনার্জি ড্রিংক, ভাজাপোড়া। এগুলা থেকে এড়িয়ে চলতে হবে বিশেষ করে ঘুমানোর চার থেকে পাঁচ ঘন্টা আগে।

    • অতিরিক্ত মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহার করা। চিকিৎসা গবেষণায় দেখা গেছে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ অনিদ্রা রোগে ভোগার কারণ। অতিরিক্ত সময় ধরে রাত জেগে মোবাইল কম্পিউটার ব্যবহার করার কারণে।
    • সিগারেট অ্যালকোহল জনিত নেশা দ্রব্যের কারণে ঘুমের ক্ষতি হয় ঘুমোতে যাওয়ার আগে সিগারেট খেলে ঘুম আসতে সমস্যা হয়।

    রাতে ঘুম না হলে করনীয়

    • রাতে ঘুম না হলে করণীয় হচ্ছে ঘুমানোর জায়গা সঠিকভাবে প্রস্তুত না। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে আপনার রুম ঠান্ডা আছে কিনা। ঠান্ডায় জায়গায় খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। ঠান্ডা জায়গাতে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসবে।
    • তাড়াতাড়ি ঘুমাতে চাচ্ছে তবু ঘুম আসছে না। তাহলে আপনি আর একটি কাজ করতে পারেন। গোসল করে নিতে পারেন গোসল করলে শরীর ঠান্ডা হয় খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে। অনেকে মনে করে গরম পানি দিয়ে গোসল করলে শরীর বেশি ঠান্ডা হয় এটি সত্য গরম পানিতে গোসল করলে শরীর অনেকক্ষণ ঠান্ডা থাকে কিন্তু শরীর অনেক কড়া হয়ে যায়। সেদিকে খেয়াল রাখবেন পানিটি যেন আপনার শরীরের জন্য উপযুক্ত হয়।

    • রাতে ঘুম না আসার অন্যতম আরেকটি কারণ হচ্ছে খাবার। অনেকে ঘুমোতে যাওয়ার আগে চা, কফি, সিগারেট খেয়ে ঘুমাতে যায় এর জন্য ঘুম আসতে দেরি হয়। ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভারি কোন খাবার খাওয়া যাবেনা রাত্রে কম খেতে হবে। দুধ,ডিম,কলা এগুলো খেয়ে ঘুমালে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।

    • রাতে খুব ভালো ঘুমের জন্য দিনের বেলায় খেলাধুলা অথবা ব্যায়াম করা খুব কার্যকারী। বিশেষজ্ঞদের মতে দিনে অন্তত 30 মিনিট ব্যায়াম করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে এবং রাতে খুব তাড়াতাড়ি ঘুম আসে।

    ১ মিনিটে ঘুম আসার উপায়

    একজন ডক্টর এন্ড্র ওইয়েইল এর মতে ৬০ সেকেন্ডের মধ্যে ঘুমের দেশে যাওয়া সম্ভব যদি ৪-৭-৮ এই নিয়মটি অনুসরণ করা হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক ৪-৭-৮ কি এবং ১ মিনিটে ঘুমানোর উপায়। ডক্টর জানিয়েছে প্রথমে নাক দিয়ে চার(৪) সেকেন্ড শ্বাস নিন। এরপর সাত(৭) সেকেন্ড শ্বাস আটকে রাখুন। এরপর আট (৮) সেকেন্ড মুখ দিয়ে  করে নিঃশ্বাস তেগ করুন। এইভাবে যতক্ষণ ঘুম না আসবে করতে থাকুন দেখবেন এক মিনিটের মধ্যে ঘুম চলে এসেছে মনের অজান্তে ঘুমিয়ে গেছে আপনি।

    কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয়

    অনেকের অনেক মতবাদে জানা গেছে ভিটামিন ডি ও আরো কিছু কিছু ভিটামিনের অভাবে রাতে ঘুম কম হয়। আপনার শরীরে যদি ভিটামিন ডি কম থাকে তাহলে আপনার ঘুম কম হবে সে সাথে সাথে চুল ওঠা,চোখের নিচে কালো দাগ,গালে মেস্তা,হাড়ের ক্ষয় ইত্যাদি সমস্যা হয়।

    ভিটামিন ডি শরীরে বাড়ানোর জন্য মাংস দুধ ডিম খেতে হবে। সে সাথে সাথে ঘুম ভালো হওয়ার জন্য আরো কিছু ভিটামিন শরীরে থাকা প্রয়োজন যেমন ভিটামিন B6, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম,ভিটামিন B12 এই ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরে থাকা প্রয়োজন নিয়মিত ঘুমের জন্য। এমনকি সুস্থ ভাবে জীবন যাপনের জন্য এ ভিটামিন গুলো আমাদের শরীরে খুবই প্রয়োজন।

    রাতে ঘুম না হলে কি কি সমস্যা হয়

    সুস্থ থাকার জন্য ঘুম কতটা প্রয়োজন আমরা সকলেই জানি রাতে ঠিকমত ঘুম না হলে কি কি সমস্যা হয় চলুন জেনে নেওয়া যাক।

    • মেজাজ খিটখিটে ভাব।
    • মাংস পেশিতে বাথ ব্যথা।
    • শরীর দুর্বল ও বিভ্রান্তি মনোভ।
    • ওজন বেড়ে যাওয়া বা কমে যাওয়া।
    • উচ্চ রক্তচাপ। 
    • কোলেস্টেরল এ সমস্যা
    • চোখে কম দেখা অতিরিক্ত চুল ওঠা।
    • এমনকি কোষ্ঠকাঠিন্যর মত রোগ হয়ে থাকে।

    রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানোর উপায়

    আমরা আগেও জেনেছি রাতে তাড়াতাড়ি কিভাবে ঘুমাতে হয় আবারো জানবো কোন কোন নিয়ম মানলে তাড়াতাড়ি ঘুমানো যায়।

    • দিনে ঘুমাবেন না।
    • ডিনারে কম খাবেন।
    • একই সময়ে ঘুমাতে যাবেন,ঘড়ির দিকে তাকাবেন না।
    • মেডিটেশন অথবা ব্যায়াম করুন।
    • রুমের সমস্ত আলো নিভিয়ে দিন।
    • ৪-৭-৮ মেথড অবলম্বন করা।
    • রুমকে ঠান্ডা রাখা।

    রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম

    রাতে ঘুম না আসা কিংবা মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়াকে বলা হয় ইনসমনিয়া বা অনিদ্রা রোগ। এই রোগটি শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকলেরই হতে পারে। বর্তমান প্রজন্মে বিশাল অংশের মানুষ অন্ধকারে জেগে থাকে। এটাকে কোন সমস্যা হিসেবেই নেয় না কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ না ঘুমের কারণে আমাদেরকে অনেক রোগে ভুগতে হয় ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ,হৃদ রোগ ও ওজন বৃদ্ধি হওয়া।

    জার্নল সায়েন্সের এক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেছে অনিদ্রা রোগের সঙ্গে মৃত্যুর কোন কারণ থাকে না কিন্তু অন্য রোগের লক্ষণ রয়েছে যেমন ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভম্ব এবং ডিপ্রেশন বিষন্নতা ও ইনসমনিয়া হওয়ার লক্ষণ থাকে।

    প্রিয় পাঠক ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার এর সুন্দর একটি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি আপনি আর্টিকেলটি পড়ে বুঝতে পেরেছেন রাতে ঘুম না হলে করণীয় কি, কোন ভিটামিনের অভাবে ঘুম কম হয় এমনকি রাতে ঘুম না আসার রোগের নাম। আর্টিকেলটিতে রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি আমি আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি রাতে ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার এর সুন্দর একটি ধারণা পেয়েছে।

    এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

    পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
    এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
    মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

    Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

    comment url