নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা আলোচনা করব নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার নিয়ে। এই আর্টিকেলটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন নিউমোনিয়া রোগ কিভাবে সংক্রমণ হয়। নিউমোনিয়া রোগ আক্রান্ত হলে রোগীর শরীরে কি কি লক্ষণ দেখা দেয়।
নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এ কোন ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হয়। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর খাবার ও তার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে, বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে আর্টিকেলটিতে। তাই নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার জানতে লেখাগুলি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার
নিউমোনিয়া হলো একটি ফুসফুস সংক্রমণ রোগ। আমাদের ফুসফুসের বায়ু থলিতে জীবাণু সংক্রমনের ফলে এই রোগটি সৃষ্টি হয়। এই রোগটি শীতকালে বেশি হয়ে থাকে। এ রোগে বেশিভাগ আক্রান্ত হয় শিশু ও বয়স্ক মানুষ। প্রতিবছর এ রোগে লক্ষাধিক মানুষ আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে তার মধ্যে শিশুর সংখ্যায় বেশি। নিউমোনিয়া রোগ আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুর হার ৩০% থাকে। যার ফলে আপনার বাচ্চার নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
রোগ আমাদের শরীরে বাসা বেধেছে কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি না তাহলে আমরা কি করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিব। তাই যেকোনো রোগের লক্ষণ সঠিকভাবে জানা থাকলে রোগ প্রতিরোধ সহজ হয়। নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার গুলি শরীরে সময় নিয়ে প্রকাশিত হয়। চলুন জেনে নেওয়া যাক নিউমোনিয়া রোগের কি কি লক্ষণ দেখা দেয় ।
- কাশির সঙ্গে হলুদ বা সবুজ রঙের কফ।
- শ্বাস নিতে অনেক কষ্ট হয়।
- কাশির বা শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ব্যথা করে।
- শ্বাস নেওয়ার সময় বুকের ভেতরে ঘ-ঘ শব্দ করে।
- শরীরের জ্বর থাকে 102 F বা 39.3 C তাপমাত্রা এর উপরে।
- বুক বা সারা শরীর ব্যথা করা।
- ক্লান্তি অনুভব হওয়া।
- খাবারে অরুচি হওয়া।
- ৩ সপ্তাহের বেশি কাশি হওয়া।
- কাশির সঙ্গে রক্ত আসা।
- শরীরে ফ্যাকাশে নীল দাগ দেখা দেওয়া।
এগুলোর মধ্যে একাধিক লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। নিউমোনিয়া রোগের যে লক্ষণ গুলো সব থেকে বেশি দেখা যায় সেগুলি হচ্ছে কাশি, জ্বর সর্দি ও ক্লান্তি আশা।
সঠিক সময়ে নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করলে পুরোপুরি নিউমোনিয়া থেকে সেরে উঠতে ২ থেকে ৪ সপ্তাহ সময় লাগে। তবে রোগীর বয়স যদি বেশি থাকে কিংবা রোগীর অবস্থা খারাপ থাকলে ভালো হতে আরও বেশি সময় লাগে। রোগীর বিশেষ রোগ ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, আইচ আই ভি এই ধরনের সমস্যা থাকলে নিউমোনিয়া ভালো হতে সময় লাগে।
নিউমোনিয়ার সংক্রমণ কারি কে ডাক্তার বিশেষ কিছু মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকে।
- ব্লাড কালচার।
- চেস্ট-এক্স-রে।
- ব্লাড কাউন্ট
- চেস্ট স্ক্যান
নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে প্রথমে এই পরীক্ষাগুলো করা হয়ে থাকে।
সাধারণত নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হয় ২ থেকে ৪ সপ্তাহ। এই চিকিৎসাটি বাড়ি থেকে নেওয়া যায় যদি রোগীর রোগ বৃদ্ধি পায় তাহলে ডাক্তারকে দেখাতে হবে। নিউমোনিয়া আক্রান্ত রোগীকে ডাক্তার প্রথমে চিকিৎসা দেয় কফ ও জ্বরের। শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে অক্সিজেন দিয়ে থাকে এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করে। নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা পেতে হলে কিছু নির্দেশ মেনে চলতে হয় যেমন।
- ধূমপান করা বন্ধ করতে হবে।
- শরীরে ঠান্ডা লাগানো যাবে না।
- জীবাণুমুক্ত ধোঁয়া ও ধূলিকণা থেকে দূরে থাকতে হবে।
- পুষ্টিকর খাদ্য খেতে হবে।
- নিউমোনিয়া হলে মাক্স পরিধান করতে হবে।
- প্রাপ্তবয়স্ক কিংবা শিশুদের ভ্যাকসিন নিতে হবে।
শিশুদের নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ফাঙ্গাস এবং টিভি রোগের জীবাণুর মাধ্যমে নিউমোনিয়া রোগ ছড়ায়। শিশুদের এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে। নিউমোনিয়া রোগ সাধারণত ফুসফুস এবং শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত করে।
নিউমোনিয়া ফুসফুস ও শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ তাই প্রথম লক্ষণ গুলো হলো কাশি, জ্বর সর্দি এবং শ্বাসকষ্ট। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের প্রথম লক্ষণ অতিরিক্ত ঠান্ডা লেগে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা এবং জ্বর সর্দি। সারা বিশ্বে প্রতি বছর যে শিশু মারা যায় তার ১৬ ভাগ শিশু নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
জন্মের পর যে সমস্ত শিশু নিউমোনিয়া রোগ আক্রান্ত হতে পারে।
- পুষ্টি হীনতা শরীরে পুষ্টির অভাব থাকলে নিউমোনিয়া দ্রুত সংক্রমণ হয়।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যাদের কম থাকে।
- হাম, হুপিং, সর্দি কাশি রোগ আক্রান্ত শিশুদের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে।
- জন্ম থেকেই ফুসফুস রোগে আক্রান্ত থাকলে।
- জন্মের পর মায়ের দুধ না খাইয়ে বাইরের খাবার খাওয়ালে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
- বাচ্চার বিরক্তি মনোভাব সব সময় কান্না করা।
- শরীরে তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকা।
- নাক দিয়ে অনেক জোরে জোরে নিঃশ্বাস নেওয়া নাকের ছিদ্র বড় হয়ে যাওয়া।
- শরীরের অক্সিজেন কমে যাওয়া ও মাথা ঝুকানো।
- বুকের মধ্যে খং খং আওয়াজ করা।
- পুরো শরীর নীল শীতল হয়ে যাওয়া।
নিউমোনিয়ার ঔষধের নাম
নিউমোনিয়া ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ রোগ। নিউমোনিয়া রোগ থেকে দূরে থাকতে হলে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জায়গাতে থাকুন গরম পানি পান করুন ধোয়া ও দুর্গন্ধ থেকে দূরে থাকুন ধূমপান বন্ধ করুন তাহলেই আপনি নিউমোনিয়া রোগ থেকে দূরে থাকবেন।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসা হলো মাইক্রোলাইড এন্টিবায়োটিক যেমন অ্যাজিথ্রোমাইসিন বা এরিথ্রোমাইসিন। শিশুদের প্রথম সারির চিকিৎসা হলো অ্যামোক্সিসিলীন এটি সাধারণত ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। কোভিড নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য সেরা এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।
অফুক্সন ২০০ এম জি ইনজেকশন একটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ অ্যান্টিবায়োটিক। নিউমোনিয়া যক্ষা টিউবারকুলোসিস ব্যাকটেরিয়ায় সংক্রমণ চিকিৎসায় অফুক্সন ২০০ এম জি ইনজেকশন ব্যবহার করা হয়। তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে প্রতিটি ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে।
নিউমোনিয়া রোগীর খাবার
ফুসফুসে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ কারী রোগ নিউমোনিয়া। এই রোগটি শিশু ও বয়স্ক দের বেশি আক্রান্ত করে। রোগটি শুরু হয় ঠান্ডা লাগা থেকে। রোগটির চিকিৎসা প্রথম থেকে না করলে আরো জটিলতা সৃষ্টি করে তাই নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি কিছু ঘরোয়া খাবার খেলে নিউমোনিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াতে ভরপুর থাকে আদা। নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী জীবাণুকে নির্মূল করে থাকে আদা।, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে কিংবা অনেক ঠান্ডা লাগার পরে বুকে কফ জমে ব্যথা করলে আদা চা খেলে সাময়িক সময়ের জন্য সুস্থ থাকা যায়।
শ্বাসকষ্ট ভালো রাখতে হলুদ খুব ভালো উপকারে আসে। বুকে কফ জমে থাকলে হলুদ চা খেলে অনেকটাই আরাম লাগে।
জ্বর সর্দি হলেই অনেক বাড়িতে মধু খাওয়ানো কিংবা চুন মধু একসঙ্গে মিশিয়ে হাতে কপালে লাগিয়ে দেওয়া হয়। মধু নিউমোনিয়া হলে তার সংক্রমণ করতে পারে না। কিন্তু নিউমোনিয়া হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারে।
নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে নির্মূল করতে প্রোবায়োটিক খুবই ভালো কাজ করে। প্রোবায়োটিক যুক্ত খাবার প্রতিদিন খেলে নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। যেকোনো ধরনের ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার খেলে নিউমোনিয়া কিংবা সকল ধরনের রোগ সংক্রমণ হতে পারে না।
নিউমোনিয়ার সাথে লড়াই করার জন্য সুষম খাবার অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। শরীরের শক্তি জোগাতে বেশি প্রয়োজন হয় সুষম খাদ্য যেমন ধরেন কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও চর্বি।
- গরু, মহিষ কিংবা ছাগলের দুধ।
- ডাবের পানি কিংবা কুশলের রস।
- পানির, ডাল এবং লেবুর মত খাদ্য।
- টক দই জাতীয় প্রোবায়োটিক খাদ্য।
এই সুষম খাবারগুলো খেলে নিউমোনিয়ার সাথে লড়াই করে। কিন্তু নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা পেতে হলে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- আইসক্রিম।
- ফ্রিজের পানি।
- ঠান্ডা খাবার।
- ফ্যাট যুক্ত খাবার।
- খাবারে অতিরিক্ত লবণ রাখা যাবে না।
প্রিয় পাঠক আশা করি নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে সুন্দর একটি ধারণা পেয়েছেন। আপনার পরিবারে নিউমোনিয়া রোগ আক্রান্ত রোগী থাকলে এই নিয়মগুলো অনুসরণ করতে পারেন আশা করি রোগী সুস্থ থাকবে।
Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান
comment url