আলসার কিভাবে ভালো হয়

আলসার নামটি সঙ্গে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। আলশার রোগে আক্রান্ত হলে আমরা অনেকে ভয় পেয়ে থাকি। আমরা মনে করি এটা মনে হয় অনেক বড় ধরনের রোগ, রোগ থেকে ভালো হতে পারব কিনা তা নিয়ে টেনশন করি।

আলসার কিভাবে ভালো হয়

কিন্তু আজকে আপনাদের জানাবো আলসার কিভাবে ভালো করতে হয় আলসার হলে করণীয় আলসার কি মারাত্মক রোগ আলসার কেন হয় আলসার হলে কোন ধরনের খাবার খেতে হবে আলসার থেকে কি ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা আছে আপনাদের সকল প্রশ্নের উত্তর এই আর্টিকেলটির মধ্যে উল্লেখ করা আছে তাই আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

আলসার কিভাবে ভালো হয়

আলসার নামটি সঙ্গে আমরা সকলেই পরিচিত কিন্তু আমরা এটা জানি না আলসার কিভাবে হয় কোন ব্যাকটেরিয়া থেকে হয়, আলসার হলে আমাদের পেটে কি হয়। পাইলোরি নামের এক ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে আমরা আলসারে আক্রান্ত হয়ে থাকি। এই ব্যাকটেরিয়া আমাদের পাকস্থলীতে ক্ষয় সৃষ্টি করে এই ক্ষয় সৃষ্টির কারণে আমরা আলসারে আক্রান্ত হয়ে পড়ি।

আলসার ভালো করতে চিকিৎসকরা ১০ দিনের থেরাপি দিয়ে থাকে। এই থেরাপি গুলোর মধ্যে অমিপ্লাজল কিছু অ্যান্টিবায়োটিক থাকে যা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হয়।কিন্তু চিকিৎসকরা এ ১০ দিনের ডাক্তারি থেরাপি দেওয়ার পরেও ঘরোয়া কিছু চিকিৎসা দিয়ে থাকে যেটির মাধ্যমেই আলসার ভালো করা বা চিরতরে নির্মূল করা সম্ভব চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক। কি কি উপায়ে আলসার নির্মূল করতে পারবো।

আলসার সংক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়া হেলিকোব্যাকটার পাইলোরিকে নির্মূল করতে সালফোরাফেন নামের উপাদান খুব কার্যকরী এই সালফোরাফেন নামের উপাদানটি থাকে ফুলকপিতে। ফুলকপি আলসার নির্মূল করতে ভালো কাজ করে থাকে কিন্তু ফুলকপি রান্না করার সময় লবণ তেল ঝাল কম দিতে হবে। নয়তো কোনো উপকার পাওয়া যাবে না। যদি পারেন ফুলকপির জুস বানিয়ে খেতে পারেন।

বাঁধাকপি আমরা সবাই খেয়ে থাকি, কিন্তু জানিনা আলসার নির্মূলের সবথেকে ভালো কার্যকারী ওষুধ হচ্ছে বাধাকপি বাঁধাকপিতে আছে ভিটামিন-সি যা পাকস্থলীর ব্যাকটেরিয়া নির্মূল করে থাকে। প্রতিদিন ২০০ মিলি বাঁধাকপি ব্লেন্ডারে ব্লেন করে ২০০ গ্রাম পানির সঙ্গে মিশিয়ে তার সঙ্গে কিছু মধু দিয়ে প্রতিদিন সকালে বাসি পেটে যদি খেতে পারেন আপনার আলসার তো হবে না আলসার যদি হয়ে থাকে চিরতরে নির্মল হয়ে যাবে।

এছাড়াও মেথি খুব ভালো কার্যকরী ঘা সারিয়ে তোলার জন্য মেথিতে আছে আঠালো উপাদান। যা পাকস্থলীর ক্ষয় রোধে ভালো কাজ করে থাকে প্রতিদিন মেথি বীজ সিদ্ধ করে পানি ও মধুর সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারলে আলসারের ক্ষয় নির্মুল হয়ে যাবে।

পাকা ও কাঁচা কলা দুটোতেই থাকে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটেরিয়া রোধ করি উপাদান যা পেটের আলসার কে জব্দ করতে খুবই ভালো কাজ করে থাকে এছাড়াও নিয়মিত খাবার তালিকাতে কাঁচা কলা রাখলে গ্যাস্টিকঅম্বল থেকে সুস্থ থাকা যায়।

এছাড়াও আলসার থেকে রক্ষা পেতে বিভিন্ন ধরনের খাবার আছে যেগুলো নিয়মিত খেতে পারলে শুধু আলসার না বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারি যেমন ধরেন মূলা, আপেল, বুবেরি, ‍ বেল পিপার বা ক্যাপসিকাম, গাজর, দই, অলিভ অয়েল, মধু, রসুন, ক্যাফেইন মুক্ত গ্রিন টি, যষ্টিমধু ইত্যাদি আলসার থেকে আমাদেরকে রক্ষা করে থাকে এই খাবারগুলো ।

আলসার হলে করণীয়

আমাদের দেশের অনেক মানুষ আলসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রিক আলসার বা পেপটিক আলসার এ আনসার গুলোতে আক্রান্ত হওয়ার একটি কারণ, সঠিক নিয়মে জীবন যাপন না করা। সাধারণত আমাদের দেশের মানুষ সঠিক নিয়মে খাবার খায় না, আর চিকিৎসা নেয়ার সময় চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খেয়ে থাকে। গ্যাস্ট্রিক আলসার ও পেপটিক আলসারে আক্রান্ত হওয়ার মূলত এই দুইটি কারণ।

খাবারের প্রতি কোন ধরনের অনীহা করা যাবে না। না খেয়ে জীবন যাপন করার ফলে পেটে অনেক গ্যাস হয়ে থাকে যার ফলে আলসারে আক্রান্ত হয়। নিয়মিত খেতে হবে পেটে ক্ষুধা লাগানো যাবে না। আর বিভিন্ন সময় খেলতে গিয়ে ব্যথা পেলে কিংবা রাস্তায় হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খেলে ব্যাথার ওষুধ খেয়ে থাকি, একটি ব্যাথার ঔষধি পারে আপনাকে আলসারে আক্রান্ত করতে তাই অযথা অকারনে কোন ওষুধ খাবেন না। 

ওষুধ খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিবেন। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষই আলসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে ধুমপান ও মদ্যপানের কারণে তাই আপনি যদি নিজেকে আলসার থেকে দূরে রাখতে চান তাহলে নেশা করা বন্ধ করে দিন। এছাড়াও আরো দুইটি কারণ আছে যেগুলি হলো অতিরিক্ত টেনশন করা ও কায়িক শ্রম করার পরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি না খাওয়া।

আলসার হলে কি কি খেতে হয়

আলসার যেহেতু একটি পেটের ক্ষয় রোগ তাই পেটকে সুস্থ রাখতে ভারী খাবার না খাওয়া উচিত। যে খাবারগুলো হজম খুব তাড়াতাড়ি হয় সেই খাবারগুলো খাওয়া আলসারে আক্রান্ত রোগীর জন্য ভালো।আলসার আক্রান্ত রোগীর খাবার যেমন ধরেন টকদই, ঘোল, ইসবগুলের ভুসি, নরম ভাত, সুজি, সাবু, কবুতরের বাচ্চার বা মুরগির মাংসের সুপ। এ ছাড়া সবুজ শাক সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, ফুলকপি, লাউ, পালং শাক, গাজর, চাল কুমড়া খাওয়ানো যাবে।

  • সকালের খাবারে রাখতে পারেন সাবু অথবা সুজি, সিদ্ধ ডিম একটি, পাকা কলা।
  • দুপুরের খাবার রাখতে পারেন নরম ভাত, পেঁপে কিংবা বাঁধাকপির সবজি আর নরম মাছ।
  • বিকেলে খেতে দিতে পারেন একটি সিদ্ধ ডিম কিংবা দই আর গাজরের হালুয়া।
  • রাতের খাবারে দিতে পারেন নরম ভাত পালং শাক চাল কুমড়া ১ পিস মুরগির মাংস। রাতে ঘুমানোর আগে কিছু না খাওয়াটাই ভালো কিন্তু আলসারে আক্রান্ত রোগীর পেট খালি রাখা উচিত নয় তার জন্য এক গ্লাস দুধ খুবই ভালো উপকারে আসে তাই দুধ খেতে পারেন।

আলসার থেকে কি ক্যান্সার হয়

গ্যাস্ট্রিক আলসার যদি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে তাহলে তো ভালো আর যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে পাকস্থলী ছিদ্র হয়ে পাকস্থলীর বিভিন্ন অংশের নালীতে ঘা হয়ে যায়। যার ফলে পাকস্থলীতে ক্যান্সারের মতো বড় রোগ হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়। এই গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার শুধু পাকস্থলীতে সীমাবদ্ধ থাকে না লিভার ফুসফুস এমনকি হাড়েও ছড়িয়ে পড়ে সঠিক সময় চিকিৎসা না নিলে এটি একটি মরণব্যাধি রোগ হতে পারে।

রেফ্রিজারেটারে সংরক্ষিত ফল ও শাক-সবজি, ধুমপান, মধ্যপান, অতিরিক্ত নেশা করা, খাবার-দাবারে অনিয়ম, সময়মতো না খাওয়া, রাস্তার ফাস্টফুড, তৈলাক্ত খাবার, অনেক মশলা জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয়ে থাকে। আর এই গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে শুরু হয় পাকস্থলীতে ছিদ্র বা ক্ষয়। আর এখান থেকে শুরু হয় আলসার, আর আলসার থেকে হতে পারে মরণব্যাধি ক্যান্সার।

গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সারের লক্ষণ।

  • সামান্য খেলে পেট ভরে যাওয়া।
  • শরীরে ক্লান্তি আসা।
  • খিদে না পাওয়া বা খাবারে অরুচি।
  • পেটে ব্যথা করা বা পেট ফুলে যাওয়া।
  • বমি বমি ভাব হওয়া কিংবা বমি হওয়া।
  • ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
  • কালো মল হওয়া।
  • এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

প্রিয় পাঠক আশা করি আলসার সম্পর্কে সম্পূর্ণ একটি ধারণা পেয়েছেন আপনি যদি আলসারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন কিংবা আলসারে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণগুলো থাকে আপনার মাঝে। তাহলে আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি সঠিক একটি ধারণা পেয়েছেন। এরকম ভালো কিছু জানতে আমাদের সঙ্গেই থাকুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url