আলু চাষের পদ্ধতি - আলু চাষ

আমাদের খাদ্য তালিকাতে থাকা খাবার গুলোর মধ্যে আলু একটি। প্রতিদিনের খাবার তালিকাতে কোন না কোন ভাবে আলু থাকেই। মাছের সঙ্গে, মাংসের সঙ্গে অথবা যে কোন সবজির সঙ্গে আলু কিন্তু আছেই। আলু আমাদের শরীরের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ করে থাকে আলোতে ভিটামিন ও ক্যালোরি আছে যা আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজন। আমাদের দেশে ধান গম ভুট্টার সঙ্গে আলু চাষ করা হয়।

আলু চাষের পদ্ধতি - আলু চাষ

আপনার আলু চাষের পদ্ধতি জানা না থাকলে আলু চাষ করতে পারবেন না। তাই আর্টিকেলটিতে আলু চাষের পদ্ধতি এবং বীজ রোপন পদ্ধতি আলুর জাতের নাম এছাড়াও কোন ধরনের মাটিতে আলু উৎপাদন বেশি হয়, আলুর রোগ জীবাণু বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেছি। এগুলো বিষয় সম্পূর্ণ জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

আলু চাষের পদ্ধতি - আলু চাষ

আলু একটি উন্নত ও প্রধান ফসল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আলু চাষ হয়ে থাকে। উৎপাদনের দিক থেকে  ধান গম ও ভুট্টার চাষ হয়ে থাকে সারা বিশ্বে যেমন, আলুও চাষ হয় তেমনি। বাংলাদেশেও আলু প্রচুর চাষ হয়। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ১ কোটি ১০ হাজার টনের মত আলো উৎপাদন হয় যা বাংলাদেশের চাহিদার থেকেও অনেক বেশি। আলু চাষে বাংলাদেশ সারা বিশ্বের মধ্যে অষ্টম স্থানে। আলো সাধারণত বাংলাদেশের মানুষ সবজি হিসেবে বেশি খেয়ে থাকে। আলুকে ভাতের বিকল্প হিসেবে খাওয়া যায়। ভাতের পরে বাংলাদেশের মানুষ প্রধান খাদ্য হিসেবে আলু খেয়ে থাকে বিভিন্ন সবজির সঙ্গে আলো বেশ মুখরোচক খাদ্য। আলু চাষ বিশ্বের ৪০ টি দেশে হয়ে থাকে তার মধ্যে আলু চাষের পদ্ধতি অবলম্বন করে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে।

আলু চাষের পদ্ধতি

আলু চাষের পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে হলে আপনাকে প্রথমেই আলু কোন ঋতুতে এবং কোন সময়ে চাষ করতে হয় সে সম্পর্কে জানতে হবে। সাধারণত আলু গরমের শেষ এবং শীতের শুরুর দিকে রোপন করা হয় তবে কিছু কিছু অঞ্চলে কয়েকদিনের আগে পিছে রোপন করা হয়ে থাকে। আলু একটি স্বল্পমেয়াদি ফসল, তিন থেকে চার মাসের মধ্যে আলু চাষ সম্পূর্ণ করা সম্ভব। আলু চাষ করতে হলে প্রথমে আপনাকে মাটি নির্ধারণ করতে হবে আলো সাধারণত দশ ও বেলে মাটিতে ভালো জন্মায় তবে সব মাটিতেই আলো চাষ করা সম্ভব

আলু চাষের জন্য মাটি প্রস্তুত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আলো চাষের শুরুতে মাটি নির্ধারণ করা হলে সেই জমিতে যদি কোন আগাছা বা আবর্জনা থাকে অথবা ধানের জমি হয় তাহলে আপনাকে সমস্ত কিছু পরিষ্কার করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে এরপরে মাটিকে ভালো করে ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে চার থেকে ছয় দিন খেলে রাখতে হবে এই সময়ে মাটির ভেতরের বিভিন্ন রোগ জীবাণু ধ্বংস হয় এই সময়ে আপনি যদি ব্লিচিং পাউডার বিঘা প্রতি দুই থেকে চার কেজি ছিটিয়ে দিতে পারেন তাহলে বেশ ভালো হয়। ছয় দিন পরে আবারো ভালোভাবে কয়েকটা চাষ দিয়ে মাটিকে একদম ধুলোর মত করতে হবে লক্ষ্য রাখতে হবে জমি যেন ভালো গভীরতা হয় ১০ ইঞ্চির মত গভীরতা হলে ভালো হবে। চাষ করা শেষে জমিতে বীজ রোপনের আগে জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে ইউরিয়ার, টিএসপি, পটাশ এবং সাথে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে। বীজ রোপনের আগে অবশ্যই বীজ ভালো না খারাপ সেটি জানতে হবে এবং ভালো মানের বীজ সংগ্রহ করতে হবে না হলে ফলন কম হতে পারে।

বীজ রোপন পদ্ধতি

বীজ রোপনের আগে বীজের গায়ে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে যার কারণে অনেক বীজ পচে যায়র সম্ভাবনা থাকে তাই বীজ রোপনের আগে ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এমন ঔষধ দিয়ে বীজ ধুয়ে নিতে পারলে বেশ ভালো হয়। বেশ ধোয়া শেষ হলে চারা রোপণের সময় লক্ষ্য রাখতে হবে ৫ ইঞ্চি পর পর যেন বীজ রোপন করা হয় তাহলে গাছ ঘন জন্মাবে ফলন বেশি হবে। বীজ রোপণ প্রক্রিয়া শেষ হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি দিতে হবে কম পানি দিলে গাছ দেরিতে বের হয় তাই লক্ষ্য রাখতে হবে প্রতিটি আলুর দাঁড়াতে যেন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি থাকে। পানি দেওয়া শেষ হলে তিন থেকে চারদিন পরে ঘাস মারা বিষ দিতে হবে যেন আলোর জমিতে ঘাস না জন্মায়। গাছ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিটামিন বিষ দিতে হবে প্রতিটি গাছে যেন ভিটামিন বিষ পর্যাপ্ত পরিমাণে পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এই সময় কোন ধরনের ছত্রাক বা পোকা নিরধক কীটনাশক দেয়া যাবে না। গাছ বের হওয়ার ১৫ দিন পরে ছত্রাক ও পোকা নিরোধক কীটনাশক ভিটামিন কীটনাশকের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে এটার পরিমাণ কীটনাশকের গায়ে লেখা অনুযায়ী দিতে হবে বেশি পরিমাণে দিলে গাছ বৃদ্ধি হওয়া কমে যাবে। এছাড়াও প্রতিটি সেচ দেওয়ার পরে ইউরিয়া সার দিতে হবে।

আলুর জাতের নাম

কৃষি তথ্য সার্ভিস (এ আই এস) এর একটি আর্টিকেলে কৃষিবিদ কামাল উদ্দিন আহমেদ, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আঞ্চলিক কৃষি গবেষক তিনি বলেন আমাদের দেশে যেসব জাতের আলু চাষ হয়ে থাকে তার মধ্যে দেশি জাত এবং উচ্চ-ফলনশীল উন্নত জাতের আলু চাষ করা হয়। তিনি বলেন আমাদের দেশে যে পরিমাণ আলু চাষ করা হয় তার মধ্যে ৬৫ ভাগ জমিতে উন্নত জাতের উচ্চফলনশীল আলু চাষ করা হয় এবং ৩৫ ভাগ দেশি আলু চাষ করা হয়।

তিনি বলেন বেশি জাতের ফলন কম হলেও দেশি জাতের আলুকে দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায় বেশি জাতের আলু উন্নত জাতের আলুর থেকে অনেক সুস্বাদু ও বাজারে এর চাহিদা বেশি থাকে। দেশে জাতের আলু ছোট এবং ওজন কম হয়। দেশি জাতের আলু গুলোর উন্নত জাতের আলুর চেয়ে ফলন অনেকটাই কম হয়ে থাকে কিন্তু উন্নত জাতের আলুর চেয়ে বেশি জাতের আলুর দাম বাজারে বেশি থাকে। দেশি জাতের আলুর নাম আউসা,চল্লিশা, দোহাজারি-লাল,সাদা গুটি শীল বিলাতী, লাল পাকরী, হাসরাই, লালশীল, পাটনাই, ফেইন্তাশীল, ও সূর্যমূখী। দেশি জাতের আলু  গুলো বেশি রোগ ও ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকে এই সমস্যা গুলোর কারণে দেশি জাতের আলু গুলোর ফলন কমে যায়। আর এই ভাইরাস বা রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে বীজের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া জন্মে থাকা তাই বেশি জাতের আলু লাগানোর আগে অবশ্যই ভালো বীজ সংগ্রহ করে লাগানো উচিত।

কোন ধরনের মাটিতে আলু উৎপাদন বেশি হয়

আলু আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ধরা যায়, ভাতের পরেই আমাদের দেশের মানুষ আলু খেয়ে থাকে আলু বিভিন্নভাবে খাওয়া যায় সবজি হিসেবে ডাল হিসেবে আলুর পরাটা ইত্যাদি ভাবে আমরা খেয়ে থাকি। তবে আলু আমাদের দেশে আমরা যে পরিমাণ খেয়ে থাকি তার থেকেও বেশি উৎপন্ন হয় যা আমাদের চাহিদার থেকেও অনেক বেশি আসলে বাংলাদেশের প্রায় কম বেশি সব অঞ্চলে আলু চাষ করা হয়ে থাক। কারণ আলু বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই হয়ে থাকে সব ধরনের মাটিতেই আলু চাষ করা সম্ভব তবে বেশি ফলন হয়ে থাকে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে।

আলুর কোন রোগ ব্যাপক ক্ষতি করে

আলু একটি শীতের ফসল এ সময়ে সূর্য আকাশে অনেক দেরিতে ওঠে কুয়াশার জন্য দেখায় মেলেনা, তবে যে কোন ফসল চাষ করলে তার রোগ বালাই থাকবে এটাই স্বাভাবিক তেমনি আলু চাষ করলে আলুরও অনেক রোগ বালাই হতে পারে তার মধ্যে সবথেকে ভয়ংকর বা যে রোগটি বেশি হয় সেটি হচ্ছে মড়ক-রোগ। আসলে মোরক-রোগ বলতে গাছের পাতা পচে যাওয়া অথবা গাছের কোন অংশ পচে যাওয়াকে বলা হয় এই রোগটি বেশি হয়ে থাকে আর এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ একটি গাছে হয়েছে বলে অন্য গাছে হবে না তা কিন্তু নয় পুরো জমিতে ছড়িয়ে পড়ে এই মোরগ-রোগ এছাড়াও আরো বিভিন্ন রোগ আছে কেমন যেমন।

  • আরলি ব্লাইট।
  • আলুর পাতা মোড়ানো রোগ।
  • আলুর মড়ক-রোগ।
  • আলুর পাতা হলুদ হওয়া রোগ।
  • আলুর ভিতরে ফাঁপা রোগ।
  • আলুর ভিতরে কালো দাগ।
  • আলুর গায়ে বিভিন্ন ঘা।
  • আলোর নরম পচা রোগ।
  • আলু শুকনো পচা রোগ।

আলু চাষের পদ্ধতি এবং আলুর বীজ রোপন, আলুর রোগ বালাই সম্পর্কে জানা থাকলে আলু চাষ করা অনেকটাই ভালো হয়। কোন কিছু করার আগে তার সম্পর্কে ভালোভাবে না জানলে সে কাজটি সম্পূর্ণ করতে অনেকটা সময় লাগে অথবা ভালো হয় না। তাই আজকের আর্টিকেলটিতে আমরা তুলে ধরেছি আলু চাষের পদ্ধতি আপনি কিভাবে আলু চাষ করা শুরু করবেন। শুরু করার পরে বীজ রোপন পদ্ধতি আলুর জাত নির্বাচন এছাড়াও কোন ধরনের মাটিতে আলুর উৎপাদন বেশি হয় সমস্ত সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আশা করি আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন ধন্যবাদ।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url