বার বার জ্বর আসার কারণ

জ্বর কোন রোগ না। জ্বর হচ্ছে বিভিন্ন রোগের লক্ষণ, আমাদের শরীর যখন বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াতে আক্রান্ত হয় তখন আমাদের শরীরে জ্বর আসে।

বার বার জ্বর আসার কারণ

জ্বর সাধারণত তিন ধরনের হয়। ইন্টারমিটেন্ট জ্বর এ আক্রান্ত হলে বার বার জ্বর আসে আবার ভালো হয়ে যায়। প্রিয় পাঠক-পাঠিকা বার বার জ্বর আসার কারণ ও তার করণীয় এবং জ্বর কেন হয় তা জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

বার বার জ্বর আসার কারণ

বিভিন্ন কারণে জ্বর হতে পারে। বার বার জ্বর আসার কারণ গুলো হচ্ছে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া। অর্থাৎ ইনফেকশন হলে জ্বর হতে পারে প্রোটোজোয়া বা ফাঙ্গাস ইনফেকশন হচ্ছে বার বার জ্বর আসার কারণ।

তাছাড়াও যে কোন ধরনের ক্যান্সারের কারণে, টিকা নিলে, ফোঁড়া বা টিউমার হলে, প্রস্রাব নালীতে ইনফেকশন, করোনা-ভাইরাস, ফুসফুসে ইনফেকশন, ডেঙ্গু, টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়া এই রোগগুলো শরীরে বাসা বাঁধলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এগুলো হচ্ছে বার বার জ্বর আসার কারণ।

চিকিৎসকদের মতে জরসা সাধারণত তিন প্রকার হয়ে থাকে, কন্টিনিউড, রেমিটেন্ট এবং ইন্টারমিটেন্ট জ্বর সাধারণত এই তিন প্রকার হয়ে থাকে এদের মধ্যে ইন্টারমিটেন্ট জ্বর বার বার আসে।

  • বার বার জ্বর আসার কারণ  গুলো হচ্ছে ফুসফুসে পানি জমা বিভিন্ন কারণে ফুসফুসে পানি জমে থাকে যক্ষা, নিউমোনিয়া, কিডনি জটিলতা, অপুষ্টি, এগুলো কারণে ফুসফুসে পানি জমতে পারে আর যতক্ষণ না ফুসফুসের চিকিৎসা করানো হবে ততক্ষণ বার বার জ্বর আসবে।
  • নিউমোনিয়ার কারণে বার বার জ্বর আসে, নিউমোনিয়া শুরুর দিকে রোগী বুঝতে পারে না  তার নিউমোনিয়া হয়েছে। আর সে কোন চিকিৎসা নেয় না আর এর ফলে বার বার জ্বর আসে।
  • মূত্রনালীতে সমস্যা থাকলে প্রস্রাবের সময় বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় আর এটি হচ্ছে বার বার জ্বর আসার কারণ। তাই প্রস্রাবের কোন সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ক্যান্সারের মত মরণব্যাধি রোগের লক্ষণ হচ্ছে বার বার জ্বর আসা শরীরে ক্লান্তি, দুর্বল মনোভাব এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে ভালো ডাক্তার দেখাতে হবে।
  • এইচ-আই-ভি এটি একটি মারাত্মক রোগ এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে বার বার জ্বর আসা।
  • এছাড়াও কিডনি, লিভার ও হার্টের বিভিন্ন সমস্যার কারণে বার বার জ্বর আসতে পারে। এই সমস্যা গুলো দেখা দিলে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে না হলে ঘন ঘন জ্বর আসতেই থাকবে।
  • অতিরিক্ত ডায়াবেটিস এবং এলার্জি থাকলে বার বার জ্বর এ আক্রান্ত হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে খাবারের তালিকা ও জীবনযাপন নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে করতে হবে।

বার বার জ্বর হলে করণীয়

বিভিন্ন তথ্য মতে শরীরের ভেতরে যখন কোন জীবাণু আক্রমণ করে সেটাকে নির্মূল করতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা, শরীরের বিভিন্ন কোষ থেকে পাইরোজেন নামের এক ধরনের পদার্থ নিঃসরণ করে। শরীরের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করতে শুরু করে আর এটাকে আমরা বলে থাকি জ্বর। তবে বার বার জ্বর হলে আমাদের কিছু করণীয় আছে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বার বার জ্বর হলে করণীয় কি আমাদের।

  • যদি জ্বর বার বার আসছে আবার ভালো হয়ে যাচ্ছে এরকম লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে তার দেয়া ওষুধ ঠিকমত খেতে হবে অনেকেই জ্বর হলে নিজের চিকিৎসা নিয়ে থাকে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে বিভিন্ন ওষুধ এমনকি অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে এটি একদমই ঠিক না শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ঔষধ সেবন করা যাবে না।
  • বিশ্রাম নিতে হবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে পরিশ্রম করা বন্ধ করতে হবে সুস্থ এবং পরিষ্কার জায়গাতে বিশ্রাম নিতে হবে।
  • মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে অথবা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে হবে অনেকেই ভেবে থাকে গোসল করলে জ্বর আরো বৃদ্ধি পাবে আসলে চিকিৎসকদের মতে গোসল করলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে তাই অবশ্যই গোসল করতে হবে।
  • ঘন ঘন মাথায় জল পটি লাগাতে হবে পুরো শরীর পাতলা কাপড় ভিজিয়ে মুছে দিতে হবে এতে করে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা কমবে।
  • তরল পানি খেতে হবে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। যার কারণে আমাদেরকে বিভিন্ন ফলের রস ডাবের পানি স্যালাইন এ ধরনের খাবার গুলো খেতে হবে।
  • জ্বর হলে শরীরে বিভিন্ন পুষ্টির অভাব দেখা দেয় যার কারণে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। কিন্তু জ্বর হলে মুখে তো একদমই রুচি থাকে না, তাই আমাদেরখাবার খেতেইচ্ছে হয় না কিন্তু পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে যেমন ডিম, কলা, আনারস, মধু ,খেজুর ইত্যাদি খাবার খেতে হবে।
  • জ্বর হলে শরীরে ঠান্ডা এবং সর্দি কাশি হয়ে থাকে যার কারণে উষ্ণ পরিবেশে থাকতে হবে।

প্রতিদিন জ্বর আসার কারণ

প্রতিটি মানুষের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৪ কিন্তু যখন শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বৃদ্ধি পায় তখন তাকে বলা হয় জ্বর। অনেকের রাত্রে জ্বর আসে কিন্তু সকালেই ভালো হয়ে যায় আসলে এ সমস্যাটা সবাইকে চিন্তায় ফেলে দেয়, আসলে প্রতিদিন জ্বর আসার কারণ হচ্ছে পাইরোগেনস। পাইরোগেনস গুলি সাধারণত অ্যান্ডোটক্সিনের মতো জীবাণু থেকে প্রাপ্ত হয়। এই পাইরোগেনস গুলি বাইরে থেকে শরীরে প্রবেশ করে আর যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে রাত্রে জ্বর হয়ে থাকে। এছাড়াও প্রতিদিন জ্বর আসার কারণ অনেক আছে যেমন ধরেন।

  • যক্ষ্মা।
  • কালা জ্বর।
  • ম্যালেরিয়া।
  • লিম্ফোমা।
  • ম্যালেরিয়া।
  • এইচ-আই-ভি ইনফেকশন।
  • কৃত্রিম জ্বর।
  • এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ফোড়া, ফুসফুসের সমস্যা, ক্যান্সার, থাইরয়েড বার বার জ্বর আসার কারণ হতে পারে।

জ্বর হলে কি করা উচিত

যার কোন রোগ নয়, এটি ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় আর এটিকে আমরা জ্বর বলে থাকি, জ্বর হলে আমাদের কিছু নিয়ম ও নির্দেশনা মেনে চলতে হয় তাহলে দ্রুত জ্বর ভালো হয়ে যায় যেমন ধরেন।

  • কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করা।
  • জল পটি দেওয়া এবং পাতলা কাপড়পানিতে ভিজে পুরো শরীর মুছে দেওয়া।
  • সময়মতো খাবার খাওয়া।
  • খাবারের তালিকাতে পুষ্টিকর খাদ্য রাখা।
  • উষ্ণ জায়গাতে বিশ্রাম নেওয়া।
  • সময়মতো ঘুমানো ও বিশ্রাম নেওয়া।
  • তরল জাতীয় খাবার খাওয়া।
  • বিভিন্ন ফলের রস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে।
  • জ্বর তিন দিনের বেশি স্থায়ী থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • জ্বরের সঙ্গে মাথা ব্যথা, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট এবং বমি ও পেটব্যথা হলে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জ্বর কেন হয়

জ্বর হওয়ার সবথেকে কমন বিষয় হচ্ছে ঋতু পরিবর্তন। ঋতু পরিবর্তনের কারণে  মানুষ খুব তাড়াতাড়ি ঠান্ডা, জ্বর, সর্দি, কাশি রোগে আক্রান্ত হয়ে যায়। এছাড়াও শরীরের ভেতরে কোন ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের আক্রমন হলে শরীরে বিভিন্ন ইনফেকশন জমে যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় শরীরের জ্বর আসে। প্রোটোজোয়া এবং ফাঙ্গাস ইনফেকশন এর কারণে জ্বর হয়ে থাকে। তাছাড়াও ক্যান্সার যক্ষা, এলার্জি, কিডনির সমস্যা, মূত্রনালীতে সমস্যা,ডায়াবেটিস বিভিন্ন কারণে মানুষ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

প্রিয় পাঠক-পাটিকাআশা করিআর্টিকেলটি পড়ে বার বার জ্বর আসার কারণ সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। ধারণা করছি বার বার জ্বর আসার কারণ জানার পরে আপনি জ্বর হলে সমস্ত নিয়ম গুলো অনুসরণ করবেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url