দাঁতে ব্যথা হলে করণীয়

প্রিয় পাঠক আজকে আমরা জানবো দাঁত ব্যথা বা দাঁতে পোকা সম্পর্কে। দাঁতের সমস্যায় কম বেশি প্রতিটি মানুষই  ভুগে কারো দাঁতে ফোঁড়া কারো দাঁতের পোকার ব্যথা কারো তো আবার মাড়ির ব্যথায় ঘুম আসে না।

দাঁতে ব্যথা হলে করণীয়

আজকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব দাঁতে পোকা কেন হয়, দাঁতে পোকা হলে করণীয়, দাঁতে ব্যথা হলে করণীয়, দাঁতে ব্যথা কমানোর উপায় সমস্ত কিছু আলোচনা করব বিস্তারিত জানতে লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

দাঁতে ব্যথা হলে করণীয়

সারা বিশ্বে ডেন্টালচিকিৎসার ক্ষেত্রে দাঁতের ব্যথা একটি সাধারন পরিস্থিতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঠিক নিয়মে চিকিৎসা করা হলে দাঁতের ব্যথা ২-৩ দিনের ভিতরে সেরে যায়। দাঁতে ব্যথা অনেক কারণে হয়ে থাকে, যেমন গর্ত হওয়ার জন্য, আঘাত পেলে, দাঁতের এনামেল ক্ষয় হয়ে গেলে, দাঁতের গ্রাউন্ডিং হয়, দাঁত বের হলে, দাঁতে পোকা হলে, দাঁত শিরশিরে ভাব হলে, দাঁতের গোড়া দিয়ে রক্ত পড়লে বিভিন্ন কারণে দাঁতে ব্যথা হয়ে থাকে।

সঠিক যত্ন না নেওয়ার কারণে দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা হয় সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা খাবারের আগে ও পরে দাঁত পরিষ্কার করা মিষ্টি জিনিস কম খাওয়া বিভিন্ন মাধ্যমে দাঁত ভালো রাখা যায়। ডেন্টাল ক্যারিস, পেরিইয়ো ডেন্টাল ইত্যাদি রোগ দূর করতে পারলে দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করা যাবে। দাঁতের ব্যথা প্রতিরোধ করতে হলে কোন কোন কাজ করতে হবে চলুন জেনে নেওয়া যাক।

  • প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় চিনি জাতীয় কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাবার সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
  • ২৪ ঘন্টায় দুইবার ব্রাশ করতে হবে।
  • ভালো মানের টুথপেস্ট ব্যবহার করতে হবে। ব্যাকটেরিয়া ও শিরশিরে ভাব যেন কমায়।
  • চকলেট , ললিপপ, আইসক্রিম, চুইংগাম এ সমস্ত খাবার খাওয়া যাবে না।
  • দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়
  • দাঁতে পোকা কেন হয়
  • দাঁতে পোকা হলে করণীয়
  • বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হলে করণীয়
  • খাবারের তালিকায় ভিটামিন-এ ও ভিটামিন-ডি সমৃদ্ধ খাবার রাখতে হবে।
  • শাকসবজি খাওয়ার পাশাপাশি নারকেল তেল, অ্যাভোকাডো, বাদাম ইত্যাদি স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার খাদ্য তালিকায় রাখুন।
  • দাঁত পিসা অভ্যাস থাকলে সেটি বন্ধ করুন।
  • খাবার খাওয়ার সময় ভালো করে চিবিয়ে নিন।

দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

দাঁতের যত্ন ও সুরক্ষার অভাবে অনেক সময় দেখা দেয় দাঁতের সমস্যা। আর তখনই শুরু হয় ব্যথা ভিন্ন ভিন্ন কারণে দাঁতের ব্যথা হয়ে থাকে দাঁতের ব্যথায় অনেকের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। তবে চিন্তার কোন বিষয় নেই ঘরোয়া উপায়ে আমরা দাঁতের ব্যথা দূর করতে পারি। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়।
  • লবঙ্গ থেঁতো করে কয়েক ফোটা রস ব্যাথার স্থানে লাগান।
  • লবঙ্গের সঙ্গে গোলমরিচ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। তারপর ব্যাথার স্থানে লাগিয়ে রাখুন এই কাজটি ২-৩ দিন করুন।
  • রসুন থেতে করে দাতে লাগিয়ে রাখুন। বেশি যন্ত্রণা হলে কাঁচা রসুন চিবিয়ে খান।
  • দাঁতের যন্ত্রণায় কিছু খেতে পারছেন না গলা, মারি, গাল ফুলে গেছে গরম পানির সঙ্গে লবণ মিশিয়ে কুলকুচি করুন।
  • একটি কাঁচা পেঁয়াজ চিবিয়ে খেয়ে নিন। যদি ঝাল লাগে তাহলে থেতলে করে দাঁতে লাগিয়ে রাখুন।
  • লেবুর রস ও হিং গুঁড়া মিশিয়ে দাঁতে লাগিয়ে রাখুন কয়েক মিনিটের মধ্যে ব্যথা সেরে যাবে।
  • দুর্বা ঘাসের রস এটি কাটা জায়গাতে লাগিয়ে দিলেও রক্ত বন্ধ হয়ে যায় দুর্বা ঘাস থেতলে করে দাঁতে লাগিয়ে রাখুন দাঁতের ব্যথা সেরে যাবে ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।
  • তুলায় কয়েক ফোটা ভ্যানিলা এক্সট্রাকট দাঁতে চেপে ধরে রাখুন।
  • সব শেষ দাঁতের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় হচ্ছে বরফ। এক টুকরা বড় কাপড়ে মুড়ে দাঁতে চেপে ধরে রাখুন এতে দাঁতের ব্যথা কমে যাবে।

দাঁতে পোকা কেন হয়

ছোট বড় সকলেরই একটাই ধারণা দাঁতে ব্যথা হয়েছে মানে দাঁতে পোকা। বাচ্চাদের দাঁতে ব্যথা হলে মা দের একটাই ধারণা আমার বাচ্চার দাঁত পোকায় খেয়ে নিচ্ছে। শুধু যে শিশুদেরই দাঁতে ব্যথা হচ্ছে তা কিন্তু নয় ছোট বড় সকলেরই এ সমস্যাটা হয়ে থাকে। এই দাঁতে পোকা বা ক্যাভিটি বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে চলে যায় যে দাঁত তুলে ফেলা লাগে। 

দাঁতে পোকা হিসাবে আমরা যেটি কে চিনি সত্যিকার অর্থে কি আসলে দাঁতে পোকা আছে দাঁতে কালো কালো দাগ, ক্ষয় ধরা, স্পট বা গর্ত থাকা এগুলোকে সাধারণ ভাষায় দাঁতে পোকা বলা হয় তবে সত্যিকার অর্থে ডাক্তারি ভাষায় এগুলোকে ডেন্টাল ক্যাভিটি বা ডেন্টাল ক্যারিজ বলে। ডাক্তারদের মতে দাঁতে কোন পোকা হয় না। দাঁতে পোকা বা ক্যারিজ যাদের হয় প্রাথমিক অবস্থায় তারা জটিল ভাবে নেয় না পরবর্তীতে দাঁতের মারাত্মক ক্ষতি হয়।

চলুন তাহলে এবার জানি দাঁতে পোকা বা ক্যাভিটি কেন হয়।
  • দাঁতে পোকা বা ক্যাভিটি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে কিছু ব্যাকটেরিয়া। যেগুলো আমাদের মুখে থাকে মুখের মধ্যে খাবার অনেকক্ষণ আটকে থাকলে এইসব ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয়ে দাঁতের গোড়ায় ক্ষয় সৃষ্টি করে।
  • দাঁত অপরিষ্কার থাকলে নিয়মিত ব্রাশ না করার ফলে দাঁতের গোড়ায় যে ময়লাটি জমা হয় সেটা থেকে ক্যাভিটি সৃষ্টি হয়।
  • শর্করা জাতীয় খাবার যেমন ভাত, রুটি, আলু এবং চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার দাতের ফাঁকে জমে থাকলে  ক্যাভিটি সৃষ্টি হয়।
  • দাঁতে  ক্যাভিটি সৃষ্টি হয়ে দাঁত ক্ষয় হতে হতে দাঁতের টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দাঁতকে তুলে ফেলতে হয়।
  • অনেকের মুখে লালা বা থুতু কমে যায় এই লালা বা থুতু দাঁত ক্ষয় বা পোকা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

দাঁতে পোকা হলে করণীয়

দাঁতে পোকা বা ক্যাভিটি হওয়ার মূলত তিনটি কারণ থাকে প্রথম কারণ মুখের মধ্যে অনেক ব্যাকটেরিয়া জমে থাকা, মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া, সঠিক নিয়মে দাঁতের যত্ন না নেওয়া। দাঁতে পোকা হওয়ার কারণ আমরা এর আগেও ব্যাখ্যা করেছি চলুন আরো কিছু উপায় আছে যেগুলোর মাধ্যমে আমরা দাঁতে পোকা বা ডেন্টাল ক্যারিজ থেকে রক্ষা পেতে পারি।
  • ক্যারিজের ঝুঁকি বেশি থাকে একদম ভেতরের দিকের দাঁতে বিশেষ করে মাড়ির দাঁতগুলোতে। মাড়ির দাঁতগুলোতে অনেক গর্ত থাকায় খাবারের পর খাবার দাঁতে লেগে থাকে এগুলো ভালোভাবে পরিষ্কার না করার কারণে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় এখান থেকে দাঁতে ক্যারিজ বা দাঁতে পোকা শুরু হয়।
  • কিছু বিশেষ খাবার আছে যেগুলো থেকে দাঁতে পোকা দাঁতে ব্যথা সৃষ্টি হয় যেমন ধরেন আইসক্রিম, মধু, চিনি, চকলেট, বিস্কিট,  চিপস ইত্যাদি খাবার খেলে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া জন্মায় এখান থেকেই দাঁতে ব্যথা ক্যারিজ সৃষ্টি হয়।
  • ঘুমানোর সময় বা খাওয়ার পরে দাঁত ভালোভাবে ব্রাশ না করে ঘুমানো। ভালো মানের টুথপেস্ট ব্যবহার না করার কারণে।
  • মুখ বেশিক্ষণ সুখ না থাকলে মুখে পর্যাপ্ত পরিমাণ লালা না থাকলে দাঁতে ক্যারিজ হয়ে থাকে।

বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হলে করণীয়

বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হওয়ার পিছনে নানা কারণ থাকে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করব।বাচ্চাদের দাঁতে পোকা হওয়ার বা ক্যারিজ হওয়ার কারণ থাকে বাচ্চাদের মুখরোচক খাবার যেমন ধরেন চকলেট,আইসক্রিম,বিভিন্ন ধরনের জুস এ খাবারগুলোয় বাচ্চাদের দাঁতের বারোটা বাজিয়ে দেয়।এগুলো খাবার থেকে দাঁতে ক্যারিজ দাঁতে ব্যথা পুজ দাঁতের ক্ষয় ইত্যাদি সমস্যা সৃষ্টি হয়।

বাচ্চাদের ৬ মাস বয়সে যে দুধ দাঁত গজায়,সে দাঁতের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়, দুধ খাওয়ার পরে বাচ্চা ঘুমিয়ে পড়লে তাদের মুখের ভিতরে অনেক ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয় সেখান থেকে সৃষ্টি হয় ক্ষয় হওয়া। তাই দুধ খাওয়ার পরে বাচ্চাদের দাঁত টিস্যু পেপার জাতীয় নরম কিছু দিয়ে মুছে দিতে হবে।বাচ্চাদের বেশিরভাগ দাঁতে ক্যারিজ হওয়ার কারণ হচ্ছে নিয়মিত দাঁত পরিষ্কার না রাখা। আপনার বাচ্চাকে আপনাকেই যত্ন নিতে হবে খেয়াল রাখতে হবে সে দাঁত পরিষ্কার রাখছে কি রাখছে না।

বাচ্চাদের বয়স যখন ৩ বছর পার হয়ে যায় তখন তাদেরকে নানা মিষ্টান্ন খাবার খাওয়ানো হয় যেমন ধরনের হরলিক্স,প্যাকেটের দুধ,জুস ইত্যাদি।খাবারগুলো খাওয়ার পরে নিয়মিত ব্রাশ না করায় দাঁতে ব্যাকটেরিয়া জমে দাঁতে পোকা বা ক্যারিজ হয়ে থাকে।বাচ্চাদের জন্য বাজারে আছে বিভিন্ন ধরনের টুথপেস্ট ০ থেকে ৫ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্য বিভিন্ন টুথপেস্ট আছে বাজারে। আবার ৫ থেকে ১২ বছর বয়সী বাচ্চাদের জন্যও আছে বিভিন্ন ধরনের টুথপেস্ট যেগুলা ব্যবহার করলে ক্যারিজ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

প্রিয় পাঠক আমি চেষ্টা করেছি দাঁতের ব্যথার করনীয় কি, দাঁতে ব্যথা কমানোর উপায়, দাঁতে পোকা কেন হয়,দাঁতে পোকা হলে করণীয় কি ব্যাখ্যা করার। আমি আশা করি আমার লেখাগুলি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url