জ্বর হলে করণীয়

শরীরের কিছু তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে বলা হয় জ্বর, শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হলেই আমরা অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ি জ্বর হলে করণীয় কি আমাদের। কি খেতে হবে, কোন ওষুধ খেলে দ্রুত জ্বর কমে যায়, কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে জ্বর কমানো যায়, জ্বর হলে কোন খাবারগুলো খেলে খুব তাড়াতাড়ি জ্বর ভালো হয়ে যায়। বিভিন্ন ভাবে জ্বর হলে করণীয় কি  তা জানার চেষ্টা করি।

জ্বর

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা  আমাদের জ্বর হলে করণীয় কি, সমস্ত বিষয় নিয়ে আর্টিকেলটি তুলে ধরেছি তাই জ্বর হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

জ্বর হলে করণীয়

জ্বর হলে করণীয়, জীবনে কখনো জ্বরে আক্রান্ত হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। প্রতিটি মানুষ কখনো না কখনো জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, আর সাধারণ তো এটি হয় ঋতু পরিবর্তনের কারণে। ঋতু পরিবর্তনের পাশাপাশি আবহাওয়ায় পরিবর্তন হয়, আর যার কারণে বাড়ছে জ্বর, সর্দি কাশি ও ঠান্ডাজনিত রোগ। বিশেষজ্ঞদের ধারণা মতে ঋতু পরিবর্তনের কারণে আবহাওর বিভিন্ন পরিবর্তন হয় যার কারণে জ্বর ও ঠান্ডা জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে মানুষ।

আরো পড়ুন: সকালের নাস্তা কখন খাওয়া উচিত

জ্বর অন্য রোগের লক্ষণ জ্বর কোন রোগ নয়। কিছু ভাইরাস, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়ার কারণে শরীরে তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। যার কারণে সৃষ্টি হয় জ্বর, সাধারণত জ্বরে আক্রান্ত হলে তিন থেকে চার দিনের ভিতরে ভালো হয়ে যায় এর জন্য কোন জটিল চিকিৎসাও নেওয়ার দরকার হয় না। কিছু ওষুধ এবং নির্দেশনা মেনে চলাফেরা করলে ভালো হয়ে যায়।

তবে কিছু জ্বর আছে যার ফলে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।  জ্বর যদি ৪ দিনের বেশি হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে, কারণ এটি মারাত্মক জ্বর। এই জ্বরের সঙ্গে যদি তীব্র মাথাব্যথা, অস্বাভাবিক আচরণ, শ্বাসকষ্ট, খিচুনি এবং বমি ও পেট ব্যথা  হয় দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জ্বর হলে গোসল ও পুরো শরীর মুছে দিতে হবে অনেকে মনে করে গোসল করলে জ্বর আরো বৃদ্ধি পাবে, আসলে এ ধারণা ভুল হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করলে কোন ক্ষতি হবে না। এছাড়াও কপালে জলপট্রি লাগিয়ে দিলে জ্বর হালকা হয়, এছাড়াও বিশ্রাম করতে হবে পানি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খেতে হবে এবং ঘুমাতে হবে তাহলে  দ্রুত জ্বর থেকে ভালো হয়ে যায়।

জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত

জ্বর হলে মুখে কোন কিছুতেই রুচি থাকে না মধু কেউ যেন চিরতার রস মনে হয়। তখন কোন খাবার খেতে ইচ্ছে করেনা তবুও কষ্ট করে খেতে হয় পথ্য জাতীয় খাবার। তবে মুখের রুচি না থাকলেও আমাদেরকে শরীরের শক্তি জোগাতে এমনকি জ্বর সারানোর জন্য ভিটামিন এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে, চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু খাবারের তালিকা সম্পর্কে।

জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের খাদ্য তালিকাতে রাখতে হবে প্রোটিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, বিভিন্ন ধরনের ডাল মটরশুটি ছোলা মাশরুম বাদাম তিসি চিয়াসিড এই ধরনের খাবারগুলোতে প্রচুর প্রোটিন থাকে। জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এই খাবারগুলো খাওয়াতে পারেন।

বিভিন্ন ফলের রস ভিটামিন-সি যুক্ত তাজা অথবা মৌসুমী ফলের রস মুখে রুচি আনতে, শরীরের দুর্বলতা কাটাতে এবং জ্বর কমাতে ভিটামিন-সি যুক্ত ফলের রস খুবই প্রয়োজন। জাম্বুরা, মাল্টা, কমলা, আপেলে, আনারস জ্বর কমাতে ও মুখের রুচি আনতে সাহায্য করে।

জ্বরে দুর্বল হওয়ার কারণে চিকেন স্যুপ অথবা ভেজিটেবল স্যুপ ব্যাপক উপকারী। প্রোটিন ও ক্যালরি সরবরাহ করে থাকে চিকেন স্যুপ অন্যদিকে ভেজিটেবল স্যুপে সঙ্গে থাকে প্রচুর ভিটামিন, মিনারেল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। চিকেন এবং ভেজিটেবল স্যুপ জ্বরের দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে।

ভাত খুব একটা উপকারী নয় তবুও আদা দিয়ে গলানো ভাত শরীরের জন্য বেশ উপকারী। শরীরে  ফ্লু -এর জন্য আদা দিয়ে ভাত গলানো খুব কার্যকরী।

মিল্ক শেকে প্রচুর ক্যালরি আছে যদি মিল্ক শেক এর সঙ্গে কিসমিস, খেজুর,ওটস, বাদাম এবং কলা একসঙ্গে খাওয়া হয় তাহলে শরীরের দুর্বলতা দূর হবে। তবে যদি জ্বরের সঙ্গে ডায়রিয়া হয়ে থাকে তাহলে মিল্ক শেক খাওয়া যাবেনা।

এছাড়া সুজি ও জাউ ভাত জ্বরের শরীরে বেশ উপকারী। এটা সহজেই খাওয়া যায়, মুখের রুচি না থাকলে লবণ ও যেকোনো সবজি দিয়ে খাওয়া যায়।

এছাড়াও ডিম, পাতলা খিচুড়ি, ডাবের পানি, আখের রস জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে খাওয়াতে পারেন এগুলো বেশ উপকারী।

জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায়

ঋতু পরিবর্তনের পাশাপাশি প্রাকৃতির অনেক পরিবর্তন হয় যা আমাদের শরীর সহজে মানিয়ে নিতে পারে না, আর যা থেকে শুরু হয় বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা। ঋতু পরিবর্তনের কারণে জ্বর সর্দি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না হালকা জ্বর এলেই অনেকে ওষুধ খেয়ে থাকে তবে কোন ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া যাবে না অনেকে তো আবার চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়ে নেয় যা একদমই ঠিক নয়।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটি ফোন করলে আমাদের শরীরের অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয় তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোন ওষুধ সেবন করা যাবে না। তবে নাপা, এইচ প্লাস, প্যারাসিটামল এই ওষুধগুলো খাওয়া যাবে। তবে জ্বর আসলেই ওষুধ খেতে হবে এমনটা না কিছু ঘরোয়া উপায়েও জ্বর থেকে সুস্থ হওয়া যায় চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক জ্বর কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে।

শরীরে জ্বর থাকলে প্রথমে বিশ্রাম নিতে হবে। বিশ্রাম নিলে শরীরের ক্লান্তি ও দুর্বল ভাব থাকে না এছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণ  ঘুমাতে হবে।

জ্বর হলে শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা তুলনায় অনেক বেশি তাপমাত্রা থাকে, তাই শরীরের তাপমাত্রা কমাতে জলপট্টি দেওয়া বেশ উপকারী তাই পাতলা কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পর পর জলপট্টি দিলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।

এছাড়াও যদি শরীরে অতিরিক্ত তাপমাত্রা হয় জ্বর কিছুতে না কমে তাহলে মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে তাহলে শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অবস্থায় আসবে।

জ্বর কমাতে তুলসী পাতা বেশ উপকারী, তুলসী পাতায় আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিবায়োটিক উপাদান যেটি শরীরের জ্বর, সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা এবং বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয় এই তুলসী পাতা। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে কয়েকটা তুলসী পাতা ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিয়ে মধু দিয়ে কিংবা গরম পানির সাথে খেলে এর সমস্ত রোগ থেকে খুব দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়।

জ্বর কমাতে মধু বেশ উপকারী মধুতে আছে আন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান। যে উপাদান শরীরের ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করে থাকে। প্রতিটি ভাইরাসজনিত রোগের কারণে মধু ও তার সঙ্গে লেবুর রস বেশ উপকারী, আপনি জ্বরে অসুস্থ হলে এক চামচ মধু এবং অর্ধেক লেবুর রস হালকা কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন, এতে করে শরীরের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে যাবে।

প্রতিটি রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়াতে আদাবেশ উপকারী শরীরে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে শরীরে হালকা জ্বর এলে আদা কুচি কিংবা আদার রস মধুর সঙ্গে মিশিয়ে অথবা পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন এটি বেশ উপকারী প্রতিটি রোগের জন্য।

জ্বর কমাতে  নিমের ছাল বেশ কার্যকারী, নিমের ছাল পানিতে ভিজিয়ে কিছুক্ষণ রেখে কিংবা রাত্রে ভিজিয়ে সকালে সেই পানি মধুর সঙ্গে  মিশিয়ে কিংবা খালি খেতে পারলে জ্বর খুব তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যায়।

এছাড়াও জ্বর হলে করণীয় হচ্ছে পুষ্টিকর ও ভিটামিন সি যুক্ত খাবার এবং বিশ্রাম নেওয়া খুবই প্রয়োজন। আপনার  জ্বর যদি সন্ধ্যায় আসে তাহলে সকাল পর্যন্ত কোনো ওষুধ না খেয়ে আপনাকে বিশ্রাম করতে হবে ঘুমাতে হবে এবং পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। জ্বর  আসলেই সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ খাওয়া যাবে না কিছুক্ষণ সময় নিতে হবে শরীরের তাপমাত্রা এমনিতেই কমে যায় যদি জ্বর তিন দিনের বেশি থাকে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জ্বর হলে কি ওষুধ খাওয়া উচিত

জ্বর হওয়া চিন্তার কোন কারণ নয় আমাদের শরীরের  ইমিউন সিস্টেম এক হাতিয়ার হচ্ছে জ্বর। দেহের পাইরোজেন নামের রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ হওয়ার মাধ্যমে শরীরের জ্বর আসে। এর ফলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় আর যার কারণে আমাদের শরীরের জীবাণু ধ্বংস হয়। আমরা অনেকেই জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজেই বিভিন্ন ধরনের ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলি কিন্তু আসলে কোন ওষুধ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া একদমই ঠিক না।

তবে জ্বর হলে চিকিৎসকরা প্যারাসিটামলের মত ওষুধ খেতে দেয় কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়া একদমই ঠিক না। শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলে কিংবা অতিরিক্ত জ্বর হলে কিছু নিয়ম অনুসরণ করলেই সুস্থ হওয়া যায় তবে কিছু কিছু ঝড় আছে যেমন ডেঙ্গু জ্বর ম্যালেরিয়া ইত্যাদি এ ধরনের জ্বর হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে জ্বর যদি তিন থেকে চার দিনের মধ্যে না কমে তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত না

জ্বর হলে এমনিতেই মুখের রুচি থাকে না কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। জ্বর হলে সব ধরনেরই খাবার খাওয়া যাবে এটা নিয়ে কোন সমস্যা নেই তবে কিছু খাবার আছে, জ্বরের শরীরে এই খাবারগুলো খেলে জ্বরের সঙ্গেঅন্য রোগ শরীরে বাসা বাঁধে তাই  জ্বর হলে এ খাবারগুলো না খাওয়াই ভালো যেমন আইসক্রিম, বা ঠান্ডা খাবার খেতে দেওয়া যাবে না, ফাস্টফুড একদমই খাওয়া যাবেনা, তৈলাক তোক খাবার এবং অতিরিক্ত ঝাল খাবার খাওয়ানো যাবে না তার সঙ্গে চা কফি এবং প্রেসার বাড়িয়ে দেয় এমন খাবার খেতে দেওয়া যাবে না।

প্রিয় পাঠক-পাটিকা আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে জ্বর হলে করণীয় কি এবং জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত জ্বর ভালো করার ঘরোয়া উপায়, জ্বর হলে কি খাওয়া  না এবং জ্বর হলে কি ওষুধ খেতে হয় সমস্ত বিষয় সম্পর্কে সুন্দর একটি ধারণা পেয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url