প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ

আজকে আমরা জানব প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে, প্রেসার লো হওয়া দুশ্চিন্তার কোন কারণ না। তবে যদি প্রেসার লো দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ বিভিন্ন হয়ে থাকে, আমরা প্রেসার লো হওয়ার প্রতিটি লক্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করেছি আর্টিকেলটিতে।

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ

প্রিয় পাঠক প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ এবং তার খাদ্য তালিকা প্রেসারের মাত্রা প্রেসার লো হলে কি কি সমস্যা হয় এবং অসুস্থতার সম্পূর্ণ বিষয়ে আর্টিকেলটিতে আলোচনা করেছি, প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ

অনেকেই প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে অনেক চিন্তিত হয়ে পড়ে, তবে আসলেই কি প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে চিন্তার বিষয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে চিন্তার কোন কারণ থাকে না। তবে লো প্রেসার যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তবে এটা আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে আমরা প্রেসার মেপে থাকি।

প্রেসার মাপার সময় দুটো পরিমাপ দেখা যায় উপরেরটা হচ্ছে সিস্টোলিক প্রেসার এবং নিচেরটা হচ্ছে ডায়াস্টোলিক প্রেসার। সিস্টোলিক প্রেসার ১২০ মিলিমিটার এর কম থাকা উচিত। এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৮০ মিলিমিটার এর কম থাকা উচিত, এটি হচ্ছে প্রেসারের স্বাভাবিক মাত্রা।

কিন্তু এর থেকেও প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ দেখা দিলে কোন সমস্যা হয় না। সিস্টোলিক প্রেসার ৯০ মিলিমিটার এবং ডায়াস্টোলিক প্রেসার ৬০ মিলিমিটার কম না আসা পর্যন্ত লো প্রেসার বলা হয় না। এর মানে ১২০ থেকে ৮০ মিলিমিটার এবং ৯০ থেকে ৬০ মিলিমিটার পর্যন্ত প্রেসার এর মাত্রা থাকলে এটি স্বাভাবিক প্রেসার ধরা হয়।

অনেকে প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ নিয়ে চিন্তিত থাকে, তবে দিনের বিভিন্ন সময় আমাদের প্রেসার বিভিন্নভাবে থাকতে পারে। ব্যায়াম, পানি-শূন্যতা, হাঁটাচলা, বিশ্রাম, ঘুম বিভিন্ন কিছুর সঙ্গে সম্পর্ক থাকে প্রেসার লো অথবা প্রেসার বেড়ে যাওয়ার। সাধারণত ঘুমের মধ্যে প্রেসার কম থাকে, সকাল থেকে আস্তে আস্তে প্রেসার বাড়তে শুরু করে দুপুর এবং বিকেলে প্রেসার সর্বোচ্চ মাত্রায় থাকে এবং সন্ধ্যার দিকে আস্তে আস্তে প্রেসার কমতে থাকে।

এটি সাধারণত সিস্টোলিকর এর ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। লো প্রেসার হাই প্রেসার এর মত কোন বড় ধরনের সমস্যা করে না। তবে যদি লো প্রেসার দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ যেসব কারণে হতে পারে চলুন সেগুলো জেনে নেয়া যাক।

  • শরীরে পুষ্টিহীনতা।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম।
  • মাথা ঘোরা অথবা মাথা হালকা বোধ হওয়া।
  • চোখে ঘোলা বা অন্ধ দেখা।
  • প্রস্রাব কম হওয়া।
  • হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
  • হঠাৎ জ্ঞান হারানো।
  • অতিরিক্ত পানি পিপাসা লাগা।
  • সঠিক নিয়মে খাবার না খাওয়া।
  • দুশ্চিন্তা।
  • বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাওয়া।
  • অপর্যাপ্ত ঘুম।
  • ডায়রিয়া।
  • অপুষ্টি।
  • বদহজম।
  • রক্তশূন্যতা।
  • রক্তপাত।
  • হরমনের সমস্যা।
  • গর্ভাবস্থা।
  • গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।

প্রেসার লো হলে করণীয়

প্রেসার লো হলে কোন সমস্যা হয় না এটা নিয়ে দুশ্চিন্তার কোন কারণ নেই। অনেকেই হাই প্রেসারের ওষুধ খেয়ে থাকে তাদের প্রেসার স্বাভাবিক এর চেয়ে একটু কমে গেলে ভয়ে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়। এটা একদমই ঠিক না ঔষধ খাওয়া বন্ধ করতে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে নিজে নিজেই সিদ্ধান্ত নেয়া একদমই ঠিক না।

তবে লো প্রেসার যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় এর ফলে যদি কোন সমস্যার দেখা দেয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা নিতে হবে। অনেক সময় প্রেসার কমে গেলে মস্তিষ্ক, কিডনি ও হৃৎপিণ্ড রক্তস্বল্পতা হতে পারে এর ফলে এসব অঙ্গের বিভিন্ন সমস্যা হয়ে থাকে। চলুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক প্রেসার লো হলে করণীয় কি।

  • দীর্ঘ সময় ধরে এক জায়গাতে বসে অথবা শুয়ে থাকলে ধীরে ধীরে উঠতে হবে।
  • সময় মত খেতে হবে খালি পেটে থাকা যাবে না।
  • সারা দিনের মধ্যে অন্তত এটা ওটা মিলে ৭ বার খাবার চেষ্টা করতে হবে।
  • খাবার স্যালাইন, গ্লুকোজ, এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রমের পরে শরীরে যেন পানি শূন্যতা সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • যাদের প্রেসার লো তাদেরকে অন্তত দিনের প্রতিটি খাবার মিলে এক চামচ লবণ রাখতে হবে।
  • অনেক সময় প্রেসার লো হওয়ার কারণে শরীরে পানি শূন্যতা সৃষ্টি হয়। শরীরে যদি পানি শূন্যতা সৃষ্টি হয় তাহলে তরল খাবার, ডাবের পানি, স্যালাইন খেতে হবে।

প্রেসার লো হলে কি খেতে হবে

একজন সুস্থ মানুষের প্রেসার ১২০/৮০ মিলিমিটার থাকে তবে যদি ৯০/৬০ মিলিমিটার এর নিচে প্রেসার এর মাত্রা নেমে যায় তাহলে তাকে লো প্রেসার বলা হয়। প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ অথবা কারণ অনেক আছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া, দুশ্চিন্তা, পানি স্বল্পতা, হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, রক্তস্বল্পতা, পুষ্টিহীনতা ইত্যাদি প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ থাকে। প্রেসার লো হলে যেসব খাদ্য খাওয়া উচিত চলুন সেগুলো জেনে নিই।

  • শরীরে পানি শূন্যতার কারণে প্রেসার লো হয়ে যায় তাই পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি এবং অন্যান্য তরল খাদ্য খেতে হবে যেমন ধরেন কফি, স্যুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন, দুধ, ঘোল, লেবু পানি এগুলো খাবার খেতে পারেন প্রেসার লো থাকলে।
  • লবণে সোডিয়াম আছে তাই লবণ রক্তচাপ বাড়াতে সাহায্য করে। যাদের লো প্রেসার আছে প্রতিদিন এক গ্লাস পানির সাথে দুই চামচ চিনির সঙ্গে এক চামচ লবণ মিশিয়ে পান করলে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকে।
  • যাদের প্রেসার অনেক লোক বাড়িতে ওষুধ নাই হাতের কাছে যদি স্যালাইন থাকে একটু খেতে পারেন পেশার নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্যালাইন ভালো কাজ করে থাকে।

লো প্রেসার হলে কি খাওয়া উচিত

যেসব খাদ্য প্রেসার লো থাকলে প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে সেসব খাদ্য আবার প্রেসার হাই থাকলে প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি, আয়রন, ভিটামিন-বি১২ এবং ফলেট লো প্রেসার এবং হাই প্রেসার এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।

স্যুপে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম থাকে তাই খাদ্য তালিকাতে বিভিন্ন ধরনের স্যুপ রাখতে পারেন চিকেন, বিফ, সবজি বিভিন্ন ধরনের স্যুপে খেতে পারেন এতে করে প্রেসার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

মাখনে প্রচুর সোডিয়াম থাকে তাই প্রতিটি খাবারের সঙ্গে মাখন রাখুন বিস্কিট, বাদাম, পনির, বাটার মিল্ক ইত্যাদি।

চকলেট এবং কড়াকফি প্রেসার নিয়ন্ত্রণের রাখতে সাহায্য করে।

এছাড়াও গরুর মাংস, মুরগির মাংস, ডিম, সামুদ্রিক মাছ এগুলোতে প্রচুর আয়রন থাকে যা প্রেসার বাড়াতে সাহায্য করে এগুলো খাদ্য তালিকাতে রাখা প্রেসারের রোগীর জন্য খুবই প্রয়োজন।

কি কি ফল খেলে প্রেসার বাড়ে

বিভিন্ন ধরনের ফল ও শাকসবজি আছে যেগুলো প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই ভালো কাজ করে থাকে। ভিটামিন-সি যে ফল গুলোর মধ্যে বেশি থাকে সেগুলো প্রেসার নিয়ন্ত্রণে খুব ভালো কাজ করে থাকে যেমন কমলা, মালটা, লেবু, এবং বিভিন্ন টক ফল। টক ফলে ভিটামিন-সি থাকে এবং এর সঙ্গে কিছু মিনারেল ও ভিটামিন থাকে। যেমন পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও প্যান্টোথেনিক। প্যান্টোথেনিক সোডিয়ামের কার্যকারিতা ঠিক রাখে।

প্রেসার কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে খেতে পারেন যেসব ফল ও শাকসবজি সেগুলো হলো।

  • কমলা।
  • মাল্টা।
  • লেবু।
  • আপেল।
  • কলা।
  • ডাবের পানি।
  • জাম।
  • আঙ্গুর।
  • গাজর।
  • পালং শাক।
  • লাল শাক।
  • কচু শাক।
  • শিম অথবা শিমের বীজ।
  • মিষ্টি কুমড়া অথবা মিষ্টি কুমড়ার বীজ।

প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ সম্পর্কে আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি, প্রিয় পাঠক আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনি প্রেসার লো হওয়ার লক্ষণ এবং প্রেসার লো হলে করণীয় ও তার খাদ্য তালিকা চিকিৎসা এবং জীবন যাপন সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url