শিশুদের জ্বর হলে করণীয়

জ্বর সব শিশুরই হয়ে থাকে জ্বর এর বিভিন্ন লক্ষণ আছে বিভিন্ন ধরনের জ্বর হয়ে থাকে আর্টিকেলটিতে শিশুদের জ্বর হলে করণীয় কি সে সম্পর্কে আমরা সম্পূর্ণ আলোচনা করেছি। তা ছাড়া শিশুদের জ্বর হলে বাবা-মাকে অনেক দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়।

শিশুদের জ্বর হলে করণীয়

তাই শিশুদের জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত আমাদের সেটিও জানতে পারবেন আর্টিকেলটি পড়লে ডায়রিয়া বমি এবং ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

শিশুদের জ্বর হলে করণীয়

শিশুদের জ্বর হলে মা-বাবা দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়, শিশু পাশে বসে মা-বাবা ভয় ও দুশ্চিন্তায় সময় কাটে। তবে জ্বর হতে পারে, জ্বর হওয়া দুশ্চিন্তার কোন বিষয় নয়, জ্বর একটি ভাইরাসজনিত রোগ  শিশুদের শরীরে বিভিন্ন ভাইরাস সংক্রমণ হলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, যার  কারণে জ্বর আসে। মৌসুমিক  ঋতু পরিবর্তনের কারণে ভাইরাসের সংক্রমণ হয়ে থাকে শিশু যেমন রাইনো ভাইরাস, করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এর কারণে শিশুদের জ্বর হয়ে থাকে।

তবে সব ভাইরাস এর জ্বরের লক্ষণ কিন্তু এক নয় ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয়। শিশুরা ভাইরাস  জ্বরে আক্রান্ত হলে সাধারণত সর্দি-কাশি, গলা ব্যথা, মাথা ও পুরো শরীর ব্যথা হয় এছাড়াও পাতলা পায়খানা ও বমি হয়ে থাকে তাছাড়াও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরের তাপমাত্রা ১০১ থেকে ১০৫ ডিগ্রি পর্যন্ত হয়ে থাকে এর সঙ্গে মাথাব্যথা চোখ ব্যথা এছাড়া পিঠ ব্যথা এগুলো ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ। শিশুদের জ্বর হলে করণীয় হচ্ছে।

  • সাধারণত শিশুদের সর্দি জ্বর হলে শিশুকে বিশ্রামে রাখতে হবে।
  • প্যারাসিটামল ও এন্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়াতে হবে।
  • জ্বর আসার সঙ্গে সঙ্গে ওষুধ খাওয়ানোর দরকার নেই সকালে জ্বর হলে রাত্রে ওষুধ খাওয়াতে হবে। এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • জ্বর যদি তিন দিনের বেশি স্থায়ী হয় তাহলে ভালো শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে।
  • কুসুম গরম পানি দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিতে হবে।
  • ভিটামিন ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে।
  • বুকের দুধ ও তরল জাতীয় ফলের রস খাওয়াতে হবে।
  • কাশি ও গলা ব্যথা হলে কুসুম গরম পানি খাওয়াতে হবে সঙ্গে লেবু মিশিয়ে।
  • বিশ্রাম নিতে হবে ও পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমাতে হবে।

শিশুর জ্বর ১০২ হলে করণীয়

যেকোনো ভাইরাস জ্বর ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত শরীরে ৩ থেকে ৪ দিন থাকে। এ জ্বর খুব বেশি হলে ২-৩ দিনে এক ডিগ্রি কমে থাকে, এটা দুশ্চিন্তার কোন কারণ নয়। হালকা জ্বর ১০০ থেকে ১০২ ডিগ্রি হলে নরম কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে দিতে হবে এবং চিকিৎসকের দেওয়া ওষুধ সময় মত খাওয়াতে হবে।

গরম এবং নরম খাবার খাওয়াতে হবে, পুষ্টিকর তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে এছাড়াও শিশুকে বিশ্রাম নিতে দিতে হবে ঘুমিয়ে থাকলে শিশুকে কোনভাবেই জাগানো যাবে না। থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মেপে দেখতে হবে  জ্বর যদি ১০০ বা তার বেশি থাকে তাহলে জ্বরের ওষুধ খাওয়াতে হবে। ওষুধ খাওয়ানোর পরেও যদি জ্বর না কমে তাহলে অন্তত ৬ ঘন্টা পরে আবার ওষুধ খাওয়াতে হবে। বেশি জ্বর হলে তাড়াতাড়ি জ্বর কমাতে সাপোসিটার ব্যবহার করতে পারেন। সাপোসিটার ব্যবহার করলে সাময়িকভাবে জ্বর কে ১০২ এর নিচে নামাতে পারে।

তবে একটি সাপোসিটার ব্যবহার করার পরে, অন্তত ৮ ঘন্টা পরে আরেকটি সাপোসিটার ব্যবহার করতে হবে  এই সময়ের মধ্যে কোন সাপোসিটার ব্যবহার করা যাবে না তবে ওষুধ খাওয়ানো যাবে। শিশুকে বুকের দুধ সহ তরল জাতীয় ফলের রস খাওয়াতে হবে তাছাড়াও পুষ্টিকর সমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে। জ্বরের কারণে অনেক শিশু খায় না অথবা খেতে চায় না। সে ক্ষেত্রে শিশুকে খালি পেটে ওষুধ খাওয়ানো যাবে কিনা সেটা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে মা-বাবা।

শিশুদের এসিডিটি কম হয় যার কারণে কোন কিছু খাওয়ানোর সম্ভব না হলেও ওষুধ খাওয়ানো যাবে। তবে খালি পেটে ওষুধ খাওয়ানো ঠিক না ওষুধ ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। কিছু জ্বরের ওষুধ আছে শিশুকে খাওয়ানোর ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে শিশুর বমি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে শিশুকে কিছুক্ষণ পরে আবার ওষুধ খাওয়াতে পারেন অথবা ওষুধ টি পরিবর্তন করে অন্য ওষুধ খাওয়াতে পারেন। শিশু যদি খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দেয় এবং বমি ও পাতলা পায়খানা হয় তার সঙ্গে খিঁচুনি হলে এবং বমি ও পাতলা পায়খানা বন্ধ না হলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

শিশুদের জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত

শিশুর জ্বর হলে শিশুকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার এবং ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার একটু বেশি খাওয়ানোর চেষ্টা করতে হবে। জ্বরের শিশুর যেকোন খাবারের চেয়ে তরল খাবার বেশ উপকারী যেমন  বুকের দুধ, ডাবের পানি, শরবত, ফলের রস এই খাবারগুলো অল্প করে খাওয়াতে হবে আর যদি ডেঙ্গু আক্রান্ত জ্বর হয় তাহলে স্যালাইন এবং গ্লুকোজ খাওয়াতে হবে।

শিশুদের জ্বর হলে বয়স সীমানা মেনে হুট করে প্যারাসিটামল খাইয়ে দিই আসলে কিন্তু এটা ঠিক না। শিশুর বয়স ২ মাস হলে সিরাপ খাওয়াতে হবে এবং সাপোজিটর ব্যবহার করা যাবে। শিশুর বয়স ৬ মাস হলে শিশুকে ট্যাবলেট খাওয়ানো যাবে তবে শিশু যদি ট্যাবলেট না খেতে পারে সে ক্ষেত্রে সিরাপ ব্যবহার করতে হবে। দুই মাসের কম বয়সের শিশুকে প্যারাসিটামল খাওয়ানো যাবে না।

শিশুর বয়স যদি ৬ মাসের নিচে হয় তাহলে মায়ের বুকের দুধ এবং তরল কিছু খাবার খাওয়ালে চলবে। কিন্তু যদি  শিশুর বয়স ৬ থেকে ১২ মাস হয় তাহলে কিছু খাবার খাওয়ানো যাবে। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক শিশুদের জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত।

  • সবজি এবং ফলের পিউরি।
  • স্যুপ।
  • কলা।
  • চিকেন স্যুপ।
  • সিদ্ধ খাবার।
  • যাও ভাত।
  • খিচুড়ি।
  • মায়ের বুকের দুধ।
  • তরল খাবার।
  • পপসিক্যাল।
  • আদা চা।
  • জোয়ান।

বাচ্চাদের দ্রুত জ্বর কমানোর উপায়

নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম অবলম্বন করলে বাচ্চাদের দ্রুত জ্বর কামানো সম্ভব। বাচ্চাদের জ্বর হলে বাবা-মা চিন্তায় পড়ে যায় আর সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার দেখায়। কিন্তু বাচ্চার জ্বর আসার ৬ থেকে ৮ ঘন্টা পরে ডাক্তার দেখানো উচিত তার আগে বাচ্চাদের জ্বর কমানোর জন্য কিছু উপায় অবলম্বন করলে দ্রুত জ্বর কমে যায়, চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক বাচ্চাদের দ্রুত জ্বর কমানোর উপায় সম্পর্কে।

  • শরীরের জ্বর আসলে পুরো শরীর ব্যথা ও ক্লান্তি অনুভব হয়ে থাকে। এরকম হলে পুষ্টিকর খাদ্য এবং বিশ্রাম নিলে জ্বর কিছুটা কমে।
  • জ্বর যদি ১০০ ডিগ্রীর বেশি হয়, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাপের প্যারাসিটামল খাওয়াতে হবে শিশুকে।
  • জ্বর দ্রুত কমানোর জন্য সাপোজিটর ব্যবহার করা যাবে। কিন্তু সাপোজিটর ব্যবহার করলে জ্বর কমতে ১ ঘন্টা সময় লাগে। সাপোজিটর দিনে একটির বেশি ব্যবহার করা যাবে না।
  • খিচুনি জ্বর হলে খুব দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  • ঋতু পরিবর্তন এর ফলে সর্দি-কাশি লাগা জ্বর হলে গরম পানি, আদা চা এবং বিশ্রাম নিলে সেরে যাবে ওষুধের কোন প্রয়োজন হয় না।
  • বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত জ্বর হলে মাথায় ঠান্ডা পানি ঢালতে হবে, নরম কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে পুরো শরীর মুছে নিতে হবে এবং হালকা কুসুম গরম পানিতে গোসল করতে হবে।  এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খেতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে কোন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না।
  • জ্বরে শিশুদের শরীরে অনেক ক্লান্তি ও দুর্বল হয়ে পড়ে এ সময় মতো মায়ের বুকের দুধ এবং তার সঙ্গে তরল জাতীয় খাবারগুলো খাওয়াতে হবে।
  • এখানে আমরা বাচ্চাদের দ্রুত জ্বর কমানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেছি ৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে। এই নিয়মগুলো শুধু ৬ মাস থেকে ১ বছর বয়সী কিংবা তার উপরের বয়সের শিশুদের জন্য। ৬ মাস এর কম বয়সী শিশুদের জন্য এই নিয়মগুলো না।

প্রিয় পাঠক-পাঠিকা, আর্টিকেলটি পড়ে শিশুদের জ্বর হলে করণীয় কি এবং শিশুদের জ্বর হলে কি খাওয়া উচিত। শিশুদের জ্বর হবার কারণ  শিশুরা কোন কোন জোরে আক্রান্ত হয় তার সুন্দর একটি উত্তর পেয়েছেন। আশা করি আর্টিকেলটি পড়ে আপনার শিশুদের জ্বর হলে করণীয় কি  সেটি আপনি নিচে করতে পারবেন এখন থেকে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url