বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ

বাল্যবিবাহ আইনত একটি দণ্ডনীয় অপরাধ, এ অপরাধটি বাংলাদেশ এবং ভারত এই দুই দেশের গ্রাম অঞ্চলে বেশিরভাগ হয়ে থাকে। বাল্যবিবাহের জন্য আমাদের দেশের নারীরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এছাড়াও ভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ

তাই বাল্যবিবাহকে না বলুন বাল্যবিবাহ মুক্ত সমাজ গড়ুন। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ হল একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং সমসাময়িক বিষয়। বাল্যবিবাহ হল অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিবাহ। বাল্যবিবাহে মেয়ে এবং ছেলে উভয়ের উপরই প্রভাব পড়ে। তবে মেয়েরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, বিশেষত নিম্ন আর্থসামাজিক পরিস্থিতির কারণে। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধের জন্য আমাদের বিভিন্ন উপায় অনুসরণ করতে হবে। যেমন-
  • মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সমান অধিকার নিশ্চিত করা।
  • বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারণ ও আইনানুগ বাস্তবায়ন করা।
  • যৌতুক, বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতন নিরোধক আইনের সচেতনতা ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা।
  • সামাজিক ও ধর্মীয় প্রথা, রীতি, ভ্রান্তি ও চাপ পরিবর্তন করা।
  • বাল্যবিবাহের দুর্নিবারণীয় ফলাফল ও মেয়েদের অবদান সম্পর্কে মানুষের মনোভাব পরিবর্তন করা।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমাদের সকলের সহযোগিতা ও দায়িত্ব প্রয়োজন। একটি সুসংস্কৃত, সুশিক্ষিত ও সুস্থ সমাজ গড়ার জন্য বাল্যবিবাহ থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই জরুরি।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয়

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে করণীয় অনেক রকমের। কিছু করণীয় হলো:


মেয়েদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শিক্ষা মেয়েদের স্বাধীনতা, আত্মবিশ্বাস ও সমাজের সম্মান বৃদ্ধি করে। স্বাস্থ্য মেয়েদের জন্য জরুরি কারণ বাল্যবিবাহের ফলে তারা যৌন ও প্রজনন সম্পর্কিত বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়। কর্মসংস্থান মেয়েদের আর্থিক স্বাবলম্বন ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখে। সামাজিক নিরাপত্তা মেয়েদের যৌন হয়রানি, নির্যাতন, অপহরণ ও অবহেলা থেকে রক্ষা করে।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কঠোর আইন ও তার প্রয়োগ করা। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ অনুযায়ী অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে করানো অপরাধ এবং এর জন্য কারাদণ্ড রয়েছে। এই আইনে বিশেষ শর্ত–সম্পর্কিত ১৯টি ধারা রয়েছে যা বিশেষ পরিস্থিতিতে বাল্যবিবাহের অনুমতি দেয়। এই শর্তগুলো পূরণ করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন, যাচাই কমিটি ও আদালতের অনুমতি প্রয়োজন। এছাড়া আইনে যৌতুক নিরোধ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিধিমালা রয়েছে।


মেয়েদের প্রতি পরিবার ও সমাজের সচেতনতা ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তোলা। মেয়েদের কে বোঝা হিসেবে না করে সম্পদ হিসেবে মনে করতে হবে। মেয়েদের শিক্ষা, চাকরি, স্বাস্থ্য ও সমাজের উন্নয়নে অবদানের ক্ষেত্রে ছেলেদের সমান ভূমিকা রয়েছে। বাল্যবিবাহ মেয়েদের জীবনের সকল সুযোগ-সুবিধা ও স্বপ্ন চুরি করে নেয়। বাল্যবিবাহ করলে মেয়েদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও সামাজিক অবস্থা নষ্ট হয়ে যায়। বাল্যবিবাহ করলে মেয়েদের সাথে সাথে তাদের পরিবার, সমাজ ও দেশের ক্ষতি হয়।

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন, ২০১৭ সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য:

  • বাল্যবিবাহ নিরোধ করা
  • শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত করা
  • শিশুদের শিক্ষার অধিকার রক্ষা করা
  • শিশুদের বিবাহের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণ রোধ করা

এই আইনের প্রযোজ্যতা:


বাংলাদেশের সকল নাগরিকের উপর প্রযোজ্য ধর্ম, বর্ণ, জাতি, নির্বিশেষে সকলের জন্য প্রযোজ্য


বাল্যবিবাহের সংজ্ঞা:


বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ আইনে বাংলাদেশ সরকার ২০১৭ সালে একটি একটি নতুন আইন প্রণয়ন করেন এটি হলো বাল্যবিবাহ নীরাধক আইন ২০১৭ যা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আনুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক বিবাহ নিষিদ্ধ করে। এই আইনে বিবাহের নিম্নতম বয়স ছেলেদের ক্ষেত্রে ২১ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ১৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এই আইনে বিরুদ্ধে বিবাহ করলে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের আইন প্রদান করা হয়েছে। আইনের বিরুদ্ধে বাল্যবিবাহ অবৈধ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।


 বাল্যবিবাহের শাস্তি:

  • কমপক্ষে ২ বছর কারাদণ্ড
  • সর্বোচ্চ ৫ বছর কারাদণ্ড
  • ১ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা
  • কারাদণ্ড ও জরিমানা উভয় দণ্ড

বাল্যবিবাহ রোধে করণীয়:

  • সচেতনতা বৃদ্ধি
  • আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ
  • সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তৈরি
  • শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা


বাল্যবিবাহ রোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা:

  • পুলিশ
  • মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তর
  • স্থানীয় সরকার

এছাড়াও বাল্যবিবাহের সরকারি বিধান সম্পর্কে জানতে হলে আপনি সরকারি কিছু ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন

  • মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট: www.mowca.gov.bd
  • আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ওয়েবসাইট: www.askbd.org
  • বাংলাদেশ জাতীয় আইন পোর্টাল: bdlaws.minlaw.gov.bd

বাল্যবিবাহ রোধ করার জন্য দ্রুত সহায়তা নিতে পারেন এই সকল নাম্বার থেকে

  • জাতীয় মহিলা হেল্পলাইন: ১০৯
  • শিশু হেল্পলাইন: ১০৯৮

প্রিয় পাঠক পাঠিকা বাল্যবিবাহ রোধে আমাদের সকলের ভূমিকা রাখার গুরুত্বপূর্ণ। আইন সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইন প্রয়োগে সহায়তা করার মাধ্যমে আমরা বাল্যবিবাহমুক্ত সমাজ গড়তে পারি। বাল্যবিবাহ সমাজ গড়তে হলে প্রথমে নিজের পরিবারকে সচেতন করতে হবে তারপরে সমাজ পরিবর্তন হবে পরে দেশ পরিবর্তন হবে। বাল্যবিবাহ সকলের জন্যই খারাপ কিছু বয়ে নিয়ে আসে তাই বাল্যবিবাহকে না বলুন বাল্যবিবাহ মুক্ত সমাজ গড়ুন ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url