চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হয় ধান এবং চালের ঘাটতি খুব একটা বোঝা যায় না, তবে বাংলাদেশ কৃষি প্রধান হলেও বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত, তাই চালের চাহিদাটাও অনেকটা বেশি থাকে চীন এবং ভারতের পরে চাল উৎপাদনে স্থান দখল করে করেছে বাংলাদেশ পৃথিবীতে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে।

চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান

চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ তৃতীয় স্থানে থাকার পরেও বাংলাদেশ চাল রপ্তানি করতে পারে না কিছুটা চালের ঘাটতি থেকে যায় এবং কিছু পরিমাণ চাল প্রতিবছর আমদানি করতে হয় যেটি বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ, বাংলাদেশে যে পরিমাণ চাল উৎপাদন হয় তা দিয়ে পৃথিবীর তৃতীয় স্থান দখল করলেও বাংলাদেশের প্রচুর চালের চাহিদা তাই চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থা এবং বাংলাদেশে চালের চাহিদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান

বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ অন্যান্য খাবারের পাশাপাশি ভাত খেয়ে জীবন যাপন করে তাই বাংলাদেশ চালের চাহিদা অনেকটাই বেশি। বাংলাদেশ যেমন ধান উৎপাদনে অনেকটাই এগিয়ে সেইসাথে চাল উৎপাদনেও বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা FAO এর প্রকাশিত গ্লোবাল ফুড আউটলুক প্রতিবেদনের তথ্য মতে চীন চাল উৎপাদনে এখনো প্রথম স্থানে।

২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশটিতে চাল উৎপাদন হয়েছে ১৪ কোটি ২৮ লাখ টন। গ্লোবাল ফুড আউটলুক এর মতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটিতে চাল উৎপাদন হতে পারে ১৪ কোটি ৩৪ লাখ টন। দেশটিতে চাল উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে চার থেকে পাঁচ শতাংশ। চাল উৎপাদনে দ্বিতীয়তে রয়েছে ভারত। জনবহুল দেশ ভারত চাল উৎপাদনে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। এ বছরে দেশটিতে চাল উৎপাদন হয়েছে ১৩ কোটি ৮ লাখ টন।

জাতিসংঘের তথ্য মতে আসছে বছর ভারতের চাল উৎপাদন বৃদ্ধি হতে পারে প্রায় ১ শতাংশের মতো। ভারতের পরে রয়েছে ভারতের পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ। ছোট দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেকটা বেশি হওয়ায় চালের চাহিদাটাও অনেক বেশি। বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত যেটি চাল থেকে আসে চালের চাহিদাটা একটু বেশি হওয়ায় স্বাভাবিক। জাতিসংঘের গ্লোবাল ফুড আউটলুকের তথ্য অনুযায়ী চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ২০১৯ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তৃতীয় স্থানে।

পৃথিবীতে এত দুর্যোগ দুর্ভিক্ষের মধ্য দিয়ে চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় স্থান দখল করে আছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৮০ লাখ টন এর মত। বিদায়ী বছরে বাংলাদেশ চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৮৩ লাখ টন আগামী বছরের চাল উৎপাদন হতে পারে ৩ কোটি ৮৯ লাখ টন উৎপাদনের বৃদ্ধির হার থাকতে পারে ১.৮ শতাংশ। বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে পৃথিবীর শীর্ষ তৃতীয় স্থানে থাকলেও প্রতিবছর বাংলাদেশকে চাল আমদানি করতে হয়।

গত কয়েক বছর চাল উৎপাদন কম হওয়ায় বাংলাদেশকে ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করতে হয়েছে। কিন্তু এই বছরে চাল উৎপাদন ভালো হওয়ায় আমদানির পরিমাণ অনেকটাই কমতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

চাল রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান

ইন্টারন্যাশনাল ফুট পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট বলেন বাংলাদেশ এখনো চাল রপ্তানিতে স্বাবলম্বী নয়। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে সরকারকে কৃষকদের থেকে ধান কিনতে হবে। ভারতের পশ্চিম রাজ্যে যে পদ্ধতিতে কৃষকদের থেকে ধান সংগ্রহ করা হয় তা অনুসরণ করা যেতে পারে। এছাড়াও বাংলাদেশের জনসংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এবং প্রতিটি মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত হওয়ার কারণে বাংলাদেশ যে পরিমাণ চাল উৎপাদন করে তার বাইরেও বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয়।

চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান

মাঝে মাঝে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন বেশি হওয়ায়। কিছু টোন চাল রপ্তানি করার মত মজুদ হয় কিন্তু আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজারে এ ধরনের বাণিজ্য কেউ করতে চায় না। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয় স্থানে হলেও বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ভাত হওয়ার কারণে চাল রপ্তানি করতে পারে না। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান কয়েক বছরের তুলনায় বৃদ্ধি হওয়ায় আশা করা যায় কয়েক বছর পরে চাল রপ্তানি করে পারবে বাংলাদেশ।

চাল আমদানিতে বাংলাদেশের অবস্থান কত ?

পৃথিবীতে চাল আমদানিতে চীনের পরে বাংলাদেশের অবস্থান চাল আমদানিতে দ্বিতীয় বাংলাদেশ। চীনের সঙ্গে আমদানিতে বাংলাদেশের অনেকটাই ভিন্নতা আছে। যুক্তরাষ্টের কৃষি বিভাগের USDA চলতি মাসের বিশ্ববাজার ও বাণিজ্যিক প্রতিবেদনে বলা হয় ২০২০-২১ এ বছরে বাংলাদেশ ২৬ লাখ ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করেছে। USDA প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন বাংলাদেশ এখন বড় আমদানিকারক দেশগুলোর মধ্যে একটি।

বাংলাদেশের আমদানি যদিও ধারাবাহিক নয় যেই বছরে উৎপাদন কম হয় সে বছর আমদানির প্রয়োজন হয়। আর যে বছরে উৎপাদন বেশি হয় সেই বছরে বাংলাদেশকে আমদানি করতে হয় না। প্রতিবেদনে আরো বলেছেন আগের তুলনায় ২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের উৎপাদন অনেকটাই বেড়ে গেছে। বাংলাদেশকে চাল আমদানি করতে হলে প্রতি কেজিতে খরচ হয় ৩৫ টাকা। ভারত থেকে চাল আমদানি করলে ৩২-৩৩ টাকা।

পাকিস্তান থেকে আমদানি করলে ৩৪ টাকা, ভিয়েতনাম ৩৮ টাকা এবং থাইল্যান্ড থেকে আমদানি করলে ৪০ টাকা। এই চালগুলো বাজারে বিক্রি হয় ৪৫ থেকে ৫২ টাকার ভিতরে। তবে চালের দাম ওঠানামা করে শেয়ার বাজারের আমদানি-রপ্তানির ওপরে এ দমগুলো অনেক সময় বাড়তেও পারে কমতেও পারে।

বাংলাদেশে চালের চাহিদা প্রতি বছর কত

বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য হচ্ছে ভাত। যে কারণে বাংলাদেশে কখনোই চালের সংকট পড়তে দিবে না কৃষি মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ চাল উৎপাদন এবং ধান উৎপাদনে বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় স্থানে আছেন এ থেকে বোঝা যায় বাংলাদেশ যথেষ্ট চাল উৎপাদনে সক্ষম।

চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান

তবে কিছু সমস্যা ও জটিলতার কারণে বাংলাদেশকে কিছু পরিমাণ চাল আমদানি করতে হয় যা সঠিকভাবে উৎপাদন করলে আমদানি প্রয়োজন হবে না। বাংলাদেশের প্রতিবছর প্রায় চালের প্রয়োজন থাকে ৩ কোটি ৮০-৮৫ লাখ টনের মতো। অর্থবছরে চালের উৎপাদন হয়েছে ৩ কোটি ৫৮ লাখ ৫০ হাজার টন। বাংলাদেশে প্রতি বছর কিছু না কিছু পরিমাণ চালের ঘাটতি থাকে।

চাল রপ্তানিতে শীর্ষ দেশ

সারা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি চাল উৎপাদন হয় চীনে, শুধু চাল নয় ধান ও উৎপাদন হয় থেকে বেশি চীনে। চীনের পারে সব থেকে বেশি ধান ও চাল উৎপাদন করে থাকে ভারত। ভারত শত ধান চাল বেশি উৎপাদন করে না বিশ্বের মধ্যে সবথেকে চাল রপ্তানিতে ভারত এগিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৫০ লাখ টনের মত চাল রপ্তানি করে থাকে ভারত। অতিরিক্ত চাল রপ্তানি করায় দেশটিতে চাল রপ্তানির জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে, অতিরিক্ত চাল রপ্তানিতে ভারতের চালের বাজারে চালের দাম প্রায় ১১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে চাল রপ্তানি করা বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশি চাল রপ্তানি করে থাকে ভারত।

প্রিয় পাঠক ও পাঠিকা আশা করি আপনি বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ার পরেও বাংলাদেশে চালের চাহিদা কেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী হওয়ার পরেও চালের চাহিদাতে ঘাটতি থাকার কারণ এবং চাল উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থ, চাল আমদানি করার পেছনের কারণ সম্পূর্ণ তথ্য পেয়েছেন আমাদের আর্টিকেলটি পড়ে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Motivational Spech কে আপনার অনুভূতি জানান

comment url